হযরত ফাতিমা (সা.আ.) অনুকরণীয় আদর্শ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(ابرابزار)
 
 
(একই ব্যবহারকারী দ্বারা সম্পাদিত একটি মধ্যবর্তী সংশোধন দেখানো হচ্ছে না)
৭০ নং লাইন: ৭০ নং লাইন:
[[fr:Fatima (a) est un bel exemple à suivre]]
[[fr:Fatima (a) est un bel exemple à suivre]]
[[ar:کون السیدة فاطمة (علیها السلام) قدوة]]
[[ar:کون السیدة فاطمة (علیها السلام) قدوة]]
[[ru:Образцовость Фатимы (А)]]
[[es:El Ejemplo de La Excelentísima Fátima (P)]]

২২:০৪, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

প্রশ্ন

হযরত ফাতিমা (সা.আ.) কোন কো দৃষ্টিকোন থেকে মুসলিম নারীদের জন্য আদর্শ?


হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.আ.) মুসলিম জাহানের সর্বশ্রেষ্ঠ মহিয়সী নারী; যিনি বিশেষ ফজিলত ও নৈতিক গুণাবলীর অধিকারী হওয়ার কারণে নারীদের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর কন্যা ফাতিমা যাহরা (সা.আ.) সম্পর্কে বলেন, আল্লাহর প্রতি ঈমান তাঁর অন্তরের গভীরে ও বাতেনে প্রবেশ করেছে। আলী (আ.) তাঁর স্ত্রী প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সা.) কর্তৃক কৃত প্রশ্নের উত্তরে, ফাতিমা (আ.)-কে আল্লাহর আনুগত্যের পথে সর্বোত্তম বন্ধু এবং সহযোগী হিসাবে উল্লেখ করেন।

হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.আ.) সদকাইনফাক (দান) করতে অত্যন্ত পছন্দ করতেন। তিনি বহু বার অভুক্ত থেকে দরিদ্রদেরকে নিজের খাদ্য দান করেছেন। এছাড়াও তিনি তাঁর বিবাহের রাতে তাঁর বিবাহের পোশাক একজন দরিদ্র ব্যক্তিকে দান করেন। এছাড়াও হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.আ.) -এর অন্যান্য নৈতিক গুণাবলী হিসেবে কুরআনের সাথে তার গভীর সম্পর্ক, নিজের সন্তানদেরকে কুরআনের শিক্ষায় গড়ে তোলা, রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ের প্রতি তার গভীর উপলব্ধির কথা উল্লেখ করা হয়।

ফাতিমা যাহরা (সা.আ.)-এর ব্যক্তিগত জীবন, যেমন, তাঁর স্বামী ও সন্তানদের প্রতি তাঁর গভীর স্নেহ-মমতামূলক আচরণ, অন্য সকল মায়েদের এবং নারীদের জন্য একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।

ফাতিমা যাহরা (আ.)-এর বৈশিষ্ট্যসমূহ

ফাতিমা যাহরা (সা.আ.)-এর জীবনকাল অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত হলেও তিনি মানুষের বিশেষ করে নারীদের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে স্মরণীয় হয়ে আছেন। তাঁর বিশেষ বৈশিষ্ট্যসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে: অধিক ইবাদত করা, মায়ের সঙ্গে আন্তরিক সম্পর্ক, পিতার বিশ্বস্ত বন্ধু হওয়া, সচ্চরিত্রতা ও হিজাব রক্ষা , স্বামীর আদর্শ স্ত্রী হওয়া, অনাড়ম্বর জীবন যাপন করা, কুরআনের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক এবং সন্তানদের কুরআন শিক্ষা দেওয়া, জীবনে শৃঙ্খলা ও নিয়ম মেনে চলা, গৃহস্থালি কাজ দাসীর সঙ্গে সমানভাবে বণ্টন করে নেওয়া (ঘরে দাসী থাকা সত্ত্বেও), প্রতিবেশীদেরকে গুরুত্ব দেওয়া, বাচ্চাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং সন্তানদের মাঝে ন্যায়পরায়নতা বজায় রাখা।[২]

ঈমান, তাক্বওয়া এবং ইবাদত

  • রাসূলুল্লাহ (সা.) স্বীয় কন্যা ফাতিমা যাহরা (সা.আ.) সম্পর্কে বলেন: «আল্লাহর প্রতি ঈমান, ফাতিমার (আ.) হৃদয়ের এত গভীরে ও বাতেনে প্রবেশ করেছে, যা তাঁকে আল্লাহর ইবাদতের জন্য সমস্ত কিছু থেকে দূরে রাখে।»[৩]
  • ইসলামের ইতিহাসের অন্যতম বিখ্যাত সাধক হাসান বসরি (২১-১১০ হিজরি) বলতেন: «ফাতিমা যাহরা (সা.আ.) ছিলেন শ্রেষ্ঠ ইবাদতকারী।তিনি আল্লাহর ইবাদতের জন্য এত দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতেন যে, তাঁর পা মোবারক ফুলে যেত।»[৪]
  • রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর স্ত্রী আয়েশা বলতেন: «রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পরে আমি ফাতিমা (সা.আ.)-এর চাইতে অধিক সত্যবাদী আর কাউকে দেখি নি।»[৫]

হিজাব এবং সচ্চরিত্রতা

হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.আ.), রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ইন্তেকালের পর, না-মাহরামদের সঙ্গে কথোপকথনে বাধ্য হয়েছিলেন। তিনি মসজিদে একটি বক্তব্য প্রদান করেন, তবে মসজিদে যাওয়ার সময় তিনি বনু হাশিমের নারীদের সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার জন্য আবেদন জানান। মসজিদে, পুরুষ ও নারীদের মাঝে একটি পর্দা টাঙানো হয় এবং তিনি সেই পর্দার আড়াল থেকে বক্তব্য প্রদান করেন। সমাজে তাঁর এরূপ উপস্থিতি তাঁর সতীত্ব ও সচ্চরিত্রতার সাথে সাংঘর্ষিক তো নয়ই বরং তাঁকে সমাজে সবচেয়ে পর্দাশীল ও সচ্চরিত্রবান নারী হিসেবে পরিচয় করিয়েছে।[৭]

স্বামীর সঙ্গে আচরণ

  • ফাতিমা যাহরা (সা.আ.), ইমাম আলী (আ.)-এর ঘরে প্রবেশের মুহূর্ত থেকে তাঁর জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তাঁর স্বামীর চিরন্তন সঙ্গী ছিলেন। হযরত আলী (আ.) স্বীয় স্ত্রী প্রসঙ্গে, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পক্ষ থেকে করা প্রশ্নের উত্তরে, হযরত ফাতেমা যাহরা (সা.আ.)-কে আল্লাহর আনুগত্যের পথে সর্বোত্তম বন্ধু এবং সহযোগী হিসাবে উল্লেখ করেন।[৮]
  • স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারস্পরিক সম্মানবোধের ক্ষেত্রে যুক্তিযুক্ত হচ্ছে নিজেদের সংসারের ঘাটতিগুলোকে অন্যদের কাছে প্রকাশ করা হতে বিরত থাকা। একদিন, ফাতিমা (সা.আ.) তাঁর পিতার নিকট উপস্থিত হলেন যখন ক্ষুধা ও দূর্বলতার প্রভাব তাঁর চোখে মুখে স্পষ্ট ছিল। রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন এই অবস্থা দেখলেন, তখন তিনি আকাশের দিকে হাত তুলে বললেন, «“হে আল্লাহ! আমার সন্তানের ক্ষুধা নিবারণ কর এবং তাঁর অবস্থার উন্নতি কর।”»[৯]


সন্তানদের সঙ্গে আচরণ

  • সালমান ফারসি বলেন: একদিন আমি ফাতিমা (সা.আ.)-কে যাঁতা ঘুরিয়ে আটা তৈরিতে মশগুল অবস্থায় দেখলাম। সেই সময় তাঁর পুত্র হুসাইন (আ.) ক্রন্দন করছিল এবং অস্থির হয়ে উঠেছিল। আমি তাঁকে বললাম আপনাকে সাহায্য করার জন্য যাঁতা ঘুরাবো না শিশুকে শান্ত করব। তিনি বললেন, "আমার সন্তানকে শান্ত করা আমার জন্য অগ্রাধিকারমূলক বিষয়, তুমি যাঁতা ঘুরাও।"[১০]
  • ফাতিমা যাহরা (সা.আ.) তাঁর জীবনের অন্তিম মুহূর্ত পর্যন্ত তাঁর সন্তানদের জন্য উদ্বিগ্ন ছিলেন। সন্তানরা মা থেকে বঞ্চিত হবেন, এটিই ছিল তাঁর জন্য সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়। এই কারণে, তিনি ইমাম আলী (আ)-কে পরামর্শ দিয়েছিলেন যে, তাঁর মৃত্যুর পর এমন কাউকে স্ত্রী হিসেবে নির্বাচন করতে যে তাঁর সন্তানদের সঠিকভাবে গড়ে তোলার দায়িত্ব নিতে সক্ষম।[১১]
  • বর্ণিত হয়েছে যে, ফাতিমা যাহরা (সা.আ.) তাঁর পুত্র ইমাম হাসান (আ)-এর সঙ্গে খেলা করতেন এবং তাঁকে উপরের দিকে ছুড়ে বলতেন: “আমার পুত্র হাসান, তোমার পিতার ন্যায় হবে; হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্য করবে। সেই আল্লাহর ‌ইবাদত-বন্দেগি করবে যিনি অসংখ্য নিয়ামতসমূহের অধিপতি। কখনও জালিমদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করবে না।”[১২]

জনগণের সঙ্গে আচরণ

জনৈক নারী, হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.আ.)-এর কাছে এসে বললেন: “আমার মাতা বৃদ্ধা এবং অক্ষম; যিনি নামাযে অনেক ভূল-ভ্রান্তি করেন; তিনি আমাকে পাঠিয়েছেন, যাতে আমি আপনার কাছে এসে জিজ্ঞেস করি যে, তিনি কীভাবে নামায আদায় করবেন। হযরত ফাতিমা (সা.আ.) বললেন: “তোমার যা কিছু জানতে ইচ্ছা হয়, জিজ্ঞেস কর।” ‌উক্ত নারী তার প্রশ্নগুলি উত্থাপন করেন, প্রশ্নের সংখ্যা ১০ পর্যন্ত পৌঁছালে ফাতিমা যাহরা (সা.আ.) অত্যন্ত আন্তরিকভাবে প্রশ্নগুলোর উত্তর দেন। মহিলাটি তার প্রশ্নের সংখ্য অধিক হওয়ার জন্য লজ্জিত হয়ে বলেন: “আমি আর আপনাকে বিরক্ত করব না।” ফাতিমা যাহরা (সা.আ.) বলেন: “আরও প্রশ্ন কর।” তখন, প্রশ্নকারীর আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির জন্য তিনি বলেন: “যদি কাউকে কোন কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়, উদাহরণস্বরূপ ঐ ব্যক্তিকে (দায়িত্বপ্রাপ্ত) যদি একটি ভারী বোঝা কোন উঁচু স্থানে বহন করে নিয়ে যেতে বলা হয় এবং এর বিনিময় হিসেবে তাকে এক লক্ষ দিনার পুরস্কার দেওয়া হয়, তবে সে কি ক্লান্ত বোধ করবে? মহিলা উত্তর দিলেন: না। ফাতিমা যাহরা (সা.আ.) বললেন: “আমি প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর প্রদানের বিনিময়ে আল্লাহর নিকট থেকে এর চেয়ে অনেক বড় ধরনের পুরস্কার প্রাপ্ত হব, তাই আমি (প্রশ্নের উত্তর দানের জন্য) কখনোই বিরক্ত ও ক্লান্ত হব না।” আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) হতে শুনেছি যে, কিয়ামতের দিন মুসলিম পণ্ডিতগণ আল্লাহর সমীপে উপস্থিত হবেন এবং মানুষকে সঠিক পথে পরিচালিত করার ক্ষেত্রে যতখানি প্রচেষ্টা চালিয়েছেন, সেই অনুয়ায়ী আল্লাহর নিকট হতে পুরস্কারপ্রাপ্ত হবেন।[১৩]

সদকা ও ইনফাক

হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.আ.) সদকাইনফাক (দান) করতে খুব পছন্দ করতেন। একজন দরিদ্র ব্যক্তি, ফাতিমা যাহরা (সা.আ.) এবং ইমাম আলী (আ.)-এর বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হওয়ার পর তাঁদের বাড়িতে যান এবং সাহায্যের জন্য আবেদন জানান। হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.আ.) তখন তাঁর বিয়ের পোশাক সেই দরিদ্র ব্যক্তিকে দান করেন এবং তিনি নিজে পুরাতন পোশাক পরিধান করেন।[১৪] তিনি বহু বার তাঁর খাবার দরিদ্রদেরকে দান করে নিজে অনাহারে থেকেছেন।[১৫]

তথ্যসূত্র

  1. আরবলী, আলী বিন ঈসা, তাহকিক: ইব্রাহিম মিয়ানজি, তেহরান, ইন্তেশারাতে ইসলামিয়া, ১৩৮২শ।
  2. মাজলিসী, মুহাম্মাদ বাকির বিন মুহাম্মাদ তাকী, বিহারুল আনওয়ার, বেইরুত, দারু ইহইয়াউত তারাসিল আরাবি, ১৪০৩হি, জি৪৩, পৃ৯১।
  3. মাজলিসী, বিহারুল আনওয়ার, জি৪৩, পৃ৪৬।
  4. মাজলিসী, বিহারুল আনওয়ার, জি৪৩, পৃ৭৬।
  5. মাজলিসী, মুহাম্মাদ বাকির বিন মুহাম্মাদ তাকী, বিহারুল আনওয়ার, বেইরুত, ১৪০৩হি, জি৪৩, পৃ৮৪।
  6. শরীয়তী, আলী, ফাতেমা ফাতেমা আস্ত, তেহরান, ইন্তেশারাতে সালমান, ১৩৫৭শ, পৃ১৩৪।
  7. ইবনে আবিল হাদীদ, আবদুল হামিদ বিন হিবাতুল্লাহ, শরহে নাহজুল বালাগা, তাহকিক: মুহাম্মাদ আবুল ফজল ইব্রাহিম, কুম, কুতুবখানায়ে আইয়াতুল্লাহ মারআশি নজফি, ১৪১৪হি, জি১৬, পৃ২৪৯।
  8. মাজলিসী, বিহারুল আনওয়ার, বেইরুত, দারু ইহইয়াউত তারাসিল আরাবি, ১৪০৩হি, জি৪৩, পৃ১১৭।
  9. মাজলিসী, বিহারুল আনওয়ার, জি৪৩, পৃ৬২।
  10. মাজলিসী, বিহারুল আনওয়ার, জি৪৩, পৃ২৮০।
  11. মাজলিসী, বিহারুল আনওয়ার, জি৪৩, পৃ১৭৮।
  12. মাজলিসী, বিহারুল আনওয়ার, বেইরুত, দারু ইহইয়াউত তারাসিল আরাবি, ১৪০৩হি, জি৪৩, পৃ২৮৬।
  13. নূরী, হোসাইন বিন মুহাম্মাদ তাকী, মুস্তাদরাকুল ওসায়েল ওয়া মুস্তামবাতুল মাসায়েল, কুম, মাও’আসসাসায়ে আলে বায়ত (আ.), জি১৭, পৃ৩১৭-৩১৮।
  14. সাফুরী, আবদুর রহমান বিন আবদুস সালাম, নুজহাতুল মাজালিস ওয়া মুখতারুন নাফায়েস, জি২, পৃ১৭৫, কায়রো, আল-মাতবা’আতুল কাস্তালিয়া, ১২৮৩হি; শোষতরী, কাজী নূরুল্লাহ, ইহকাকুল হক্ক ওয়া ইজহাকুল বাতিল, জি১০, পৃ৪০১, কুম, কুতুবখানায়ে আইয়াতুল্লাহ মারআশি নজফি, প্রথম মুদ্রণ, ১৪০৯হি।
  15. মহল্লাতী, যবীহুল্লাহ, রিয়াহিনুশ শরিয়া, তেহরান, দারুল কুতুবুল ইসলামিয়া, ১৩৯৬শ, জি১, পৃ৭২।

টেমপ্লেট:تکمیل مقاله