জায়নবাদী ধারণার সৃষ্টি

WikiPasokh থেকে
Wahidshia (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০০:৩২, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ ("{{question}} জায়নবাদী ধারণা কীভাবে গঠন হলো? {{question end}} {{answer}} বিশ্বের ইহুদিদের ছত্রভঙ্গ হওয়া থেকে বাঁচানোর জন্যই মূলত জায়নবাদের ধারণার সৃষ্টি হয়, যার উদ্দেশ্য ছিল ফিলিস্তিনে একট..." দিয়ে পাতা তৈরি)
প্রশ্ন

জায়নবাদী ধারণা কীভাবে গঠন হলো?

বিশ্বের ইহুদিদের ছত্রভঙ্গ হওয়া থেকে বাঁচানোর জন্যই মূলত জায়নবাদের ধারণার সৃষ্টি হয়, যার উদ্দেশ্য ছিল ফিলিস্তিনে একটি স্বাধীন ইহুদি রাষ্ট্র গঠন এবং বিশ্বের সমস্ত ইহুদিদের সেখানে একত্রিত করা। বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে ইউরোপে ইহুদিদের উপর সৃষ্ট চাপই মূলত ইহুদিদের সংগঠনের প্রেরণাকে আরও জোরদার করে। অস্ট্রিয়ার ইহুদি লেখক ‍“থিওডর হার্জল” -এর ধারণা, একটি স্বাধীন ইহুদি ভূখণ্ড গঠনের লক্ষ্যে জায়নবাদী ধারণা সৃষ্টির অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে ওঠে। তিনি ১৮৯৫ সালে ‍“দ্য জুইশ স্টেট” নামে একটি বইয়ে এই ধারণাটি লিখেন এবং প্রকাশ করেন।

জায়নবাদের প্রকৃতি

জায়নবাদ হলো ইহুদি জাতির একটি আন্দোলন, যাদের লক্ষ্য ফিলিস্তিনে একটি স্বায়ত্তশাসিত ইহুদি সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। এই আন্দোলনের নামটি জেরুজালেমের জায়ন পর্বত (দাউদ নবির সমাধিস্থল) থেকে উদ্ভূত হয়েছে।[1] এই আন্দোলনের পথপ্রদর্শকেরা জাতিগত বৈষম্য এবং ইহুদিদের আধিপত্যের ভিত্তিতে তাদেরকে ফিলিস্তিনে আগমনের জন্য আহ্বান জানায় এবং "ফিলিস্তিন হল প্রতিশ্রুত মুক্তিদাতার পুণ্যভূমি" শ্লোগানের ভিত্তিতে সেখানে তাদের বসতি স্থাপন করে। এই ধারণা বাস্তবায়নের জন্য তারা ফিলিস্তিনের আদি অধিবাসী অর্থাৎ মুসলিম ও খ্রিষ্টান আরবদের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় এবং তাদেরকে হিংস্রভাবে বিতাড়িত বা হত্যা করার মাধ্যমে এই ভূখণ্ডের একটি বিরাট অংশ দখলে নিয়ে নেয়।[2]

জায়নবাদ একটি রাজনৈতিক সংগঠন, যারা সহিংসতার মাধ্যমে ফিলিস্তিন এবং তার আশেপাশের আরব দেশগুলোতে একটি স্বাধীন ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং বিশ্বের সকল ইহুদিদেরকে সেই রাষ্ট্রে একত্রিত করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।[3]

উৎপত্তির পটভূমি

শুরুতে সংগঠনটির ফিলিস্তিনে কোন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা উদ্দেশ্য ছিল না, বরং তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল ইহুদিদের ছত্রভঙ্গ হওয়া থেকে রক্ষা করা। এই প্রাথমিক ধারণা থেকেই মূলত এই আন্দোলনের উৎপত্তি ঘটে। [4]

রাশিয়া, পোল্যান্ড এবং রোমানিয়ার মতো বিভিন্ন পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলিতে ইহুদিদের উপর চাপ সৃষ্টি, ইহুদিদের সংগঠনের অনুপ্রেরণাকে আরও শক্তিশালী করে। এ প্রসঙ্গে পিঙ্কার নামক এক ইহুদি নেতা ‌‘স্বায়ত্তশাসন’ নামে একটি বই লেখেন, যা ইহুদিদের সংগঠনকে পূর্বের চাইতে আরও অনেক বেশি অনুপ্রাণিত করে। এই বইয়ে তিনি লেখেন,

“বিশ্ব ইহুদিদেরকে ঘৃণার চোখে দেখে, কারণ পুরো পৃথিবীতে আমাদের কোনও স্বদেশ, কেন্দ্র বা স্বাধীনতা নেই, এবং আমরা সর্বত্র বিদেশি হিসাবে বিবেচিত হই এবং এই কষ্টের প্রধান প্রতিকার হচ্ছে সারাবিশ্বের ইহুদিরা তাদের মাতৃভূমিতে (ফিলিস্তিন) একত্রিত হওয়া এবং একটি স্বাধীন ইহুদি জাতি গঠন করা। ...”

এই প্রস্তাবের সূত্রধরে ‍‘জায়নবাদ প্রেমিক’ সমাজ তৈরি হয়, যারা নিম্নলিখিত উদ্দেশ্যগুলো অনুসরণ করে:

  1. হিব্রু ভাষাকে পুনরুজ্জীবিত করা।
  2. ইহুদিদেরকে ফিলিস্তিনে অভিবাসনে আমন্ত্রণ জানানো ও উৎসাহিত করা।#ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড অধিগ্রহণ ও বসবাসের বন্দোবস্ত করা। [5]

এই সংগঠনটির অর্থায়ন হত বিত্তশালী ইহুদি ব্যারন এডমন্ড রথসচাইল্ড -এর মত ইহুদি পুঁজিপতিদের মাধ্যমে, যা দিয়ে তারা ফিলিস্তিনে কয়েকটি ছোট জমি অর্জন করতে এবং সেখানে ইহুদিদের বসতি স্থাপন করতে সক্ষম হয়। ‌‘জায়নবাদ প্রেমিক’ আন্দোলনটি শুরুতে উল্লেখযোগ্য কোনও আন্দোলন ছিল না এবং এর কোনও সুস্পষ্ট রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও ছিল না; পরে অস্ট্রিয়ার ইহুদি লেখক থিওডর হার্জল, এক ইহুদির সাথে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয় এবং একটি স্বাধীন ইহুদি ভূখণ্ড তৈরির উদ্দেশ্যে কাজ শুরু করে। এ প্রসঙ্গে ১৮৯৫ সালে তিনি ‌‘দ্য জুইশ স্টেট’ নামে একটি বই লেখেন ও প্রকাশ করেন। বইটিতে তিনি তার ধারণা সম্পর্কে লেখেন,

“ইহুদিদের সমস্যার সমাধান হচ্ছে, যাদের নিজ দেশের দুঃখকষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা নেই, তারা যেন একটি বৃহৎ জাতির জন্য যথেষ্ট হয় এমন এক বিশাল অঞ্চলে সমবেত হয়।”

হার্জলের বই এবং জায়নবাদী রাষ্ট্র গঠন সম্পর্কে তার প্রদত্ত ধারণার প্রতি ইহুদিদের তীব্র অভ্যর্থনা, জায়নবাদের সমর্থকদেরকে বিশেষ করে হার্জলকে সুইজারল্যান্ডের বাসেলে প্রথম জানয়বাদি সম্মেলন আয়োজন করতে প্ররোচনা দেয়। [6]