নবু্য়ত ঘোষণার আগে মহানবির ধর্ম
নবুয়ত ঘোষণার আগে মহানবি (স.) কোন ধর্ম অনুসারী ছিলেন?
নবুয়ত ঘোষণার আগে মহানবি (স.) কোন ধর্মের অনুসারী ছিলেন এ বিষয়ে মুসলিম মনীষীগণ ভিন্ন মত পোষণ করেন; সেগুলো মধ্যে হযরত মুসা (আ.)-এর ধর্ম, হযরত ঈসা (আ.)-এর ধর্ম এবং দ্বীনে হানিফ তথা হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর শরিয়ত ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তবে এ ক্ষেত্রে সর্বজনসিদ্ধ বিষয়টি হল মহানবি (স.) বে’সাত তথা নবুয়ত ঘোষণার আগে তিনি (স.) একত্ববাদী ছিলেন এবং মূর্তিপূজা থেকে সর্বদা ছিলেন অসন্তুষ্ট।
উল্লেখিত দাবীর পক্ষে নিম্নোক্ত দলীলাদি উপস্থাপিত হয়েছে:
যে সকল লোকেরা পূর্ববর্তী নবিগণ (আ.)-এর জীবনী সম্পর্কে অবগত ছিল ইমাম আলী (আ.) তাদের সম্মুখে মহানবি (স.) যে শিরক ও গুনাহ থেকে পবিত্র ও মুক্ত ছিলেন বিষয়টি জোর কণ্ঠে বলতেন। [সাহিফায়ে আলাউইয়্যাহ, পৃ. ৩৪২ ও ৫০৩; বিহারুল আনওয়ার, খ. ১০, পৃ. ৪৫।] পাশাপাশি তাঁর (স.) এবং তাঁর খান্দানের (বংশ) একত্ববাদী হওয়ার বিষয়টিকে স্মরণ করতেন।[নাহজুল বালাগাহ, খোতবা নং ৯৪, ৯৬ ও ২১৪।] ইতিহাসের সাক্ষ্য ও বিভিন্ন রেওয়ায়েতের বর্ণনার ভিত্তিতে মহানবি (স.)-এর পূর্বপুরুষগণ ছিলেন একত্ববাদী এবং তাঁর সম্মানিত পিতামহ ছিলেন দ্বীনে হানিফ ও হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর অনুসারী।
কৈশোরে সিরিয়া সফরে বাহিরা নামক জনৈক খ্রিষ্টান পাদ্রির সাথে মহানবি (স.)-এর সাক্ষাত ঘটে। বাহিরা পাদ্রি কিশোর মুহাম্মাদের চেহারায় নবুয়্যতের নিদর্শন দেখতে পেয়ে তাঁকে পরীক্ষা করার জন্য লাত ও উজ্জা নামের দুই মূর্তির কসম দেন, তখন মুহাম্মাদ (স.) বাহিরাকে বলেন: ((لا تَسألنی بِهِما، فَوَ اللّه ما أبغضتُ شَیئَاً بُغضهما؛)) ঐ দু’য়ের (মূর্তির) কসম আমাকে দেবেন না, আল্লাহর কসম ঐ দু’য়ের চেয়ে বেশি আমি কোন কিছুকে ঘৃণি করি না।[শারহুশ শিফা, খ. ২, পৃ. ২০৮; দেখুন ইবনে কাসীর, আস-সিরাতুন নাবাভিয়্যাহ, খ. ১, পৃ. ২৪৫।]
ঐতিহাসিক গ্রন্থসমূহে নামায, রোজা ও হজ্জসহ যে সকল ইবাদত মহানবি (স.) নবুয়ত ঘোষণার আগে আঞ্জাম দিতেন সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। হেরা গুহায় ইবাদতে মশগুল হওয়া তাঁর (স.) বহুদিনের ইবাদী অভ্যাস হিসেবে উল্লেখিত হয়েছে। মহানবি (স.)-এর হজ্জ ছিল মুশরিকদের হজ্জ থেকে আলাদ; তাদের হজ্জে ছিল শিরকের শ্লোগান। কিন্তু হজ্জে ইব্রাহিমীর সাথে তার হজ্জের আমলের মিল ছিল স্পষ্ট, যেমন আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা।[শারহুশ শিফা, খ. ২, পৃ. ২০৯।]