কুরআনের প্রকাশ্য অর্থের উপর নির্ভর করা

Wahidshia (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০০:০৭, ১ মার্চ ২০২৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (→‎তথ্যসূত্র)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)
প্রশ্ন

কুরআনের প্রকাশ্য অর্থের উপর কী নির্ভর করা যাবে?

কুরআনের প্রকাশ্য অর্থের উপর নির্ভর করার ক্ষেত্রে কিছু শর্ত, যেমন আরবি ভাষা বুঝা, প্রেক্ষাপটের প্রতি মনোযোগ এবং মুহকামাত (স্পষ্ট) এবং মুতাশাবিহাত (অস্পষ্ট) আয়াতগুলির জ্ঞান থাকা আবশ্যক। সাধারণভাবে, কুরআনের আয়াতগুলো দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত যথা: মুহকামাত আয়াত (স্পষ্ট আয়াত); যেগুলোর ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই, এবং মুতাশাবিহাত আয়াত (অস্পষ্ট আয়াত); যেগুলোর ব্যাখ্যা স্পষ্ট তথা মুহকামাত আয়াতগুলির আলোকে করতে হবে। অতএব, প্রকাশ্য বা দৃশ্যমানের (জাহের) উদ্দেশ্য যদি গোপন বা অভ্যন্তরীণের (বাতেন) বিপরীতে হয়ে থাকে, তবে কুরআনের প্রকাশ্য অর্থ (জাহেরে কুরআন) গ্রহণযোগ্য (হুজ্জাত) হবে। কিন্তু, যদি "প্রকাশ্য " অর্থ (জাহের) এর উদ্দেশ্য কারিনা ও আরবি ভাষা বুঝা ব্যতীত হয়ে থাকে, তবে শুধুমাত্র প্রকাশ্য বা বাহ্যিক অর্থের উপর কখনোই নির্ভর করা যাবে না।

কুরআনের আয়াতসমূহের প্রকাশ্য অর্থের উপর নির্ভর করা

কুরআনের আয়াতগুলো সাধারণত দুটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়:

  • মুহকামাত (স্পষ্ট আয়াত): যেগুলোর ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই।
  • মুতাশাবিহাত (অস্পষ্ট আয়াত): যেগুলোর ব্যাখ্যা প্রয়োজন, অর্থাৎ এগুলোকে মুহকামাত তথা স্পষ্ট আয়াতগুলোর আলোকে বুঝতে হবে, যেগুলোকে উম্মুল কিতাব বা কিতাবের ভিত্তি বলা হয়।[১]

যদি প্রকাশ্য বা দৃশ্যমানের (জাহের) উদ্দেশ্য যদি গোপন বা অভ্যন্তরীণের (বাতেন) বিপরীতে হয়ে থাকে, তবে কুরআনের প্রকাশ্য অর্থ (জাহেরে কুরআন) গ্রহণযোগ্য (হুজ্জাত) হবে। কারণ কুরআনের গোপন বা বাতেনী অর্থ মাসুমগণ ব্যতীত অন্য কারও পক্ষে সফলভাবে উপলব্ধি করা সম্ভব নয়।[২] কুরআনে গোপন অর্থ এবং বহু স্তরের ব্যাখ্যা থাকার বিষয়টি সম্পর্কে অনেক হাদিসে উল্লেখ রয়েছে। ইমাম আলী (আ) বলেছেন:

"কুরআনের একটি সুন্দর প্রকাশ্য অর্থ এবং একটি গভীর ও গোপন অর্থ রয়েছে এবং এর বিস্ময় অফুরন্ত আর এর গোপনীয়তা কখনও শেষ হবে না।[৩]
  • জাবির ইবন আবদুল্লাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বাকের (আ.)-এর কাছে একটি আয়াতের ব্যাখ্যা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। ইমাম একটি উত্তর দিলেন, জাবির পুনরায় যখন একই আয়াত সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন, ইমাম ভিন্ন একটি উত্তর দিলেন। জাবির বললেন: "আপনি আমাকে ইতিপূর্বে অন্য একটি উত্তর দিয়েছিলেন।" ইমাম (আ.) বললেন:
"জাবির! কুরআনের একটি বাতেনী বা গোপন অর্থ রয়েছে এবং এই গোপন অর্থেরও আরেকটি গোপন অর্থ রয়েছে এবং এমনকি প্রকাশ্য অর্থেরও বহু স্তর রয়েছে। হে জাবির! কুরআনের কোন কিছুই মানব বিবেক দ্বারা তাফসীরযোগ্য নয়, কারণ এমনটি হতে পারে যে, আয়াতের শুরু এক বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত এবং এর সমাপ্তি অন্য বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত। কুরআন একটি ধারাবাহিক কথা, যার বহু দিক রয়েছে।"[৪]

কুরআনের আয়াতের প্রকাশ্য অর্থের উপর নির্ভর করার শর্তাবলী

যদি "প্রকাশ্য " অর্থ (জাহের) এর উদ্দেশ্য কারিনা ও আরবি ভাষা বুঝা ব্যতীত হয়ে থাকে, তবে শুধুমাত্র প্রকাশ্য বা বাহ্যিক অর্থের উপর কখনোই নির্ভর করা যাবে না। কারণ আয়াতগুলির বাহ্যিক অর্থ বুঝার জন্য শুধুমাত্র আরবি ভাষার নিয়ম-কানুন জানা ছাড়াও কুরআনের ভাষা পরিপূর্ণরূপে বুঝা, কারায়েন বা প্রেক্ষাপটের প্রতি যেমন অন্যান্য আয়াত ও রেওয়ায়েতের প্রতি লক্ষ্য করা আবশ্যক। এটি এমনকি সেই আয়াতসমূহের জন্যও প্রযোজ্য, যেগুলির প্রকাশ্য স্পষ্ট অর্থ রয়েছে এবং মুহকামাত আয়াত হিসেবে গণ্য করা হয়। কারণ কুরআনের আয়াতগুলি পরস্পর সংযুক্ত এবং কিছু আয়াত অন্যগুলির কারিনা তথা প্রমাণ হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এবং তাঁর পবিত্র আহলে বাইত (আ.)-কে অবশ্যই কুরআনের তাফসীরকারী ও বয়ানকারী হিসেবে মান্য করতে হবে, আর কুরআন নিজেই বর্ণনা করছে:

"আমরা এই যিকর’কে (কুরআন) তোমার প্রতি নাযিল করেছি, যাতে মানুষের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা তুমি তাদের জন্য স্পষ্ট করতে পারো, হয়তোবা তারা চিন্তা-ভাবনা করবে।”[৫]

তবে, মুতাশাবিহাত আয়াতের ক্ষেত্রে (অস্পষ্ট আয়াত) কখনোই প্রকাশ্য অর্থের উপর নির্ভর করা যাবে না। উদাহরণস্বরূপ, ﴾وَجَاءَ رَبُّکَ وَالْمَلَکُ صَفًّا صَفًّا﴿[৬] প্রকাশ্য অর্থ হচ্ছে যে, আল্লাহ এসেছেন এবং ফেরেশতারা সারিবদ্ধভাবে হাজির হয়েছেন। অথবা ﴾الرَّحْمَنُ عَلَی الْعَرْشِ اسْتَوَی﴿[৭] আয়াতের বাহ্যিক অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ সিংহাসনে (আরশে) বসে আছেন।

এই আয়াত এবং অন্যান্য অস্পষ্ট আয়াতগুলিকে স্পষ্ট আয়াতগুলির যেমন ﴾... لَیْسَ کَمِثْلِهِ شَیْءٌ وَهُوَ السَّمِیعُ الْبَصِیرُ﴿[৮] পাশে রেখে ব্যাখ্যা করতে হবে যে আসার অর্থ হচ্ছে আল্লাহর নির্দেশ, আর «استوی» এর উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহর আধিপত্য। আর এক্ষেত্রে যদি বাহ্যিক অর্থের উপর নির্ভর করা হয় তবে আল্লাহর ক্ষেত্রে শরীরের ধারণা তৈরি হবে।

ওহাবিরা, শুধুমাত্র আয়াতগুলির প্রকাশ্য অর্থের উপর নির্ভর করে এবং মুহকাম আয়াত এবং আকলগত মূলনীতির প্রতি মনোযোগ না দিয়ে দাবি করেন: "আল্লাহর দিক এবং স্থান রয়েছে এবং তিনি আসমানের উপরে অবস্থিত আরশে বসে আছেন। আল্লাহ সত্যিকারের হাত এবং চোখ অধিকারী।"[৯] তারা আরও বলেন "আল্লাহ প্রতিরাতে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হন এবং সকালে পুনরায় ফিরে যান"।[১০] এমনকি ইবন তাইমিয়া স্পষ্টভাবে বলেছিলেন: " আল্লাহর শরীরিক ও তুলনা করার বিষয়টিকে অস্বীকার করে কুরআন, সুন্নাহ বা ইজমায় কোন কিছু উল্লেখ করা হয় নি।"[১১] হাম্বালি, হাসাউয়ি এবং ইবাদিয়ারাও অনুরূপ কথা বলেছেন।[১২]

তথ্যসূত্র

  1. রেগরিফতে আয আয়ে ৭, সুরায়ে আলে ইমরান।
  2. ওয়াকেআ/ ৭৯।
  3. নাহজুল বালাগা, তরজমায়ে মোহাম্মাদ দাশতি, খোতবা ১৮, পৃ:৬৪।
  4. নেগাহ কোনীদ বে মজলেসি, মোহাম্মাদ বাকের, বহারুল আনওয়ার, বেইরুত, দার আহইয়াউত তোরাসিল আরাবি, খ:৮৯, পৃ:৯১ ও ৯৪ ও ৯৫।
  5. নাহল/ ৪৪।
  6. ফজর/ ২২।
  7. তা-হা/ ৫।
  8. শূরা/ ১১।
  9. ইবনে হাজর আসকালানি, আদ-দোরুল কামেনাহ, বেইরুত, পৃ:১৪৫; নেগাহ কোনীদ বে আহমাদ বিন যায়নি চালান মুফতি মক্কা, সারগোজাশতে ওহাবিয়্যাত, তরজমায়ে ইব্রাহিম ওহিদ দামগানি, নাশর গোলেস্তানে কাওসার, চাপে আওওয়াল, ১৩৭৬, পৃ:১৬।
  10. ওমর আবদুস সালাম, মোকালেফ ওহাবিয়্যাত লেল কুরআন ওয়া সুন্নাহ, দারুল হেদায়াহ, চাপে আওওয়াল, ১৪১৬, পৃ:৮।
  11. ইবনে তাইমিয়া, আল-ফাতাওয়াল কুবরা, বেইরুত, দারুল মা'রিফা, পৃ:২১-২৩।
  12. সুবহানি, জাফর, বোহুছ ফি আল-মিলাল ওয়ান নিহাল, কোম, লাজনায়ে ইদারায়ে আল-হাউযাতিল ইলমিয়াহ, চাপে দোম, ১৪১৫, খ:২, পৃ:২৪৭।

টেমপ্লেট:تکمیل مقاله