ক্বাজা ও ক্বাদার

WikiPasokh থেকে
Wahidshia (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৪:২৫, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ ("{{question}} ক্বাজা (''قضا'') ও ক্বাদার (''قدر'') কী? {{question end}} {{answer}} ইসলামি ধর্মতত্ত্বে '''ক্বাজা''' (''قضا'') বা নির্ধারিত ভাগ্য এবং '''ক্বাদার''' (''قدر'') বা ভাগ্য নির্দিষ্টকরণ, একটি মৌলিক ধারণা; যা ঘটনাবল..." দিয়ে পাতা তৈরি)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)
প্রশ্ন

ক্বাজা (قضا) ও ক্বাদার (قدر) কী?

ইসলামি ধর্মতত্ত্বে ক্বাজা (قضا) বা নির্ধারিত ভাগ্য এবং ক্বাদার (قدر) বা ভাগ্য নির্দিষ্টকরণ, একটি মৌলিক ধারণা; যা ঘটনাবলি সংঘটিত হওয়ার ধরণ এবং বিশ্বের নানা বিষয় নিয়ন্ত্রণের প্রক্রিয়াকে বুঝায়। ‌

“ক্বাজা” (নির্ধারিত ভাগ্য) বা নিয়তি বলতে কোন একটি ঘটনাকে তার বস্তুগত ভূমিকা ও শর্তাবলি পূর্ণ হওয়ার পর চূড়ান্ত ও অবধারিত ভাবে সংঘটিত হওয়াকে বুঝায়। অন্য কথায়, (قضا الهی) ক্বাজা-ই-ইলাহি বা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত ভাগ্য বলতে, কোন প্রক্রিয়ার পর্যায়ক্রম এবং কার্য-কারণগত অনিবার্য ফলাফল, যা কোনো ঘটনাকে সংঘটিত করে। “ক্বাদার” বা “ক্বাদারে ইলাহি” (আল্লাহ কর্তৃক ভাগ্য নির্দিষ্টকরণ) বা তাকদির বলতে আল্লাহ কর্তৃক প্রতিটি ঘটনার পরিমাণ, সীমা এবং বৈশিষ্ট্য নির্ধারণকে বুঝায়। এই বৈশিষ্ট্যগুলো পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন কারণের প্রভাবে বাস্তবায়িত হয়ে থাকে।

ইসলামি শিক্ষায় ক্বাজা (قضا) ও ক্বাদার (قدر) দুভাবে বিভক্ত হয়:

  • জ্ঞানগত ক্বাজা ও ক্বাদার: এই ধরনটি ঘটনাগুলোর সংঘটনের সময়, স্থান এবং ধরণ সম্পর্কে আল্লাহর জ্ঞান সম্পর্কিত। এই দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী, আল্লাহ আগে থেকেই জানেন প্রতিটি ঘটনা কীভাবে এবং কী পরিস্থিতিতে ঘটবে। আল্লাহর এই জ্ঞান মানুষের এখতিয়ারের (ইচ্ছা ও স্বাধীনতা) সাথে কোনো পারস্পরিক বৈপরীত্য সৃষ্টি করে না; কারণ আল্লাহ মানুষের এখতিয়ার সম্পর্কে জ্ঞাত এবং তিনি জানেন যে মানুষ তার ইচ্ছা ও স্বাধীনতা ব্যবহার করে কোন পথটি বেছে নেবে।
  • বস্তুগত ক্বাজা ও ক্বাদার: এই ধরনটি ঘটনাগুলোর দৃশ্যমান ও বাহ্যিক অস্তিত্বের প্রতি নির্দেশ করে। এই অবস্থায়, আল্লাহ প্রতিটি সৃষ্টি ও ঘটনার জন্য নির্দিষ্ট আকার, বৈশিষ্ট্য এবং সীমাবদ্ধতা নির্ধারণ করেছেন। বস্তুগত ক্বাজা ও ক্বাদারের প্রকৃত উদাহরণের মধ্যে রয়েছে মানুষের আকৃতি, লিঙ্গ, ত্বকের রং এবং এমনকি পৃথিবীতে তার জীবনের সীমারেখা। মানুষের আমল এবং আচরণও এই বস্তুগত ক্বাজা ও ক্বাদারের পরিধির মধ্যে সংঘটিত হয়। এই সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও, মানুষ তার জীবনের পথ বেছে নেয়ার এখতিয়ার ও স্বাধীনতা রাখে।

ইসলামি বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গিতে, ক্বাজা ও ক্বাদার মানুষের এখতিয়ারের সাথে বিরোধপূর্ণ নয়। যদিও আল্লাহ সকল বিষয়ের সামগ্রিক সীমা ও পরিমাপ নির্ধারণ করেছেন, তবুও মানুষের আমল ও আচরণের চূড়ান্ত নির্বাচন মানুষের নিজের হাতেই রয়েছে। কারণেই, মানুষ তার নিজের সিদ্ধান্ত এবং আমলের ফলাফলের জন্য দায়বদ্ধ থাকবে।[১]

ক্বাজা অর্থ

ক্বাজা (قضاء) শব্দের আভিধানিক অর্থ হল ফয়সালা করা বা মীমাংসা করা - তা কাজের মাধ্যমে হোক বা কথার মাধ্যমে, আল্লাহর সাথে সম্পর্কিত হোক বা অন্য কারো সাথে।[২] এছাড়াও এর অর্থ হল কোন কিছু সম্পন্ন করা এবং বিচার করা। কাজি (قاضی) শব্দটি এই কারণে ব্যবহৃত হয় যে, তিনি দুই পক্ষের মধ্যে বিচার করেন এবং তাদের বিষয়ে ফয়সালা দেন, এজন্য তাকে কাজি বলা হয়।[৩][৪] পবিত্র কুরআনের ক্বাজা শব্দটি তিনটি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে[৫]:

  • ক্বাজা (قضاء) শব্দটি সৃষ্টি, নির্মাণ এবং কোন কাজের সমাপ্তি অর্থে: ﴾فَقَضَىٰهُنَّ سَبْعَ سَمَـٰوَاتٍۢ فِى يَوْمَيْنِ সাত আসমানকে দুই দিনে সৃষ্টি করে সম্পূর্ণ করলেন।﴿(ফুসসিলাত:১২)
  • বিধান বা হুকুমকে বাধ্যতামূলক ও আবশ্যক করা অর্থে: ﴾وَقَضَىٰ رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوٓا۟ إِلَّآ إِيَّاهُ আর তোমার প্রভু এই বিধানকে আবশ্যক করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া তোমরা অন্যের উপাসনা করো না।﴿(বনী ইসরাইল:২৩)
  • ঘোষণা করা এবং সংবাদ প্রদান করার অর্থে: ﴾وَقَضَيْنَآ إِلَىٰ بَنِىٓ إِسْرَ‌ٰٓءِيلَ فِى ٱلْكِتَـٰبِ আর আমরা বনী ইসরাইলকে কিতাবের মধ্যে স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছি।﴿(বনী ইসরাইল:৪)

কালাম শাস্ত্রের পণ্ডিতদের পরিভাষায়, জাবর (বাধ্য) ও এখতিয়ার (স্বাধীন) -এর আলোচনায়, ক্বাজা-ই-ইলাহি বা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত ভাগ্য হচ্ছে কোনো ঘটনার চূড়ান্ত ও অবশ্যম্ভাবী পরিণতি যখন তার সমস্ত ভূমিকা, কারণ ও পূর্বশর্ত পূরণ হয়েছে। ক্বাজা-ই-ইলাহি বা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত ভাগ্য বলতে বুঝায়, কোনো ঘটনা তার ভূমিকা, কারণ এবং পূর্বশর্ত পূরণ হওয়ার পর, তার চূড়ান্ত ও অবশ্যম্ভাবী পরিণতিতে পৌঁছায়।[৬]

ক্বাদার অর্থ

ক্বাদার বা আল্লাহ কর্তৃক ভাগ্য নির্দিষ্টকরণের অর্থ হল, আল্লাহ তাআলা প্রতিটি ঘটনার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ, সীমা, ধরণ, সময় ও স্থান নির্ধারণ করে রেখেছেন। ক্বাদারের পর্যায়টি ক্বাজার আগে আসে। ক্বাদারের পর্যায় হচ্ছে পরিমাপ করা এবং কাজের কারণ ও পটভূমি প্রস্তুত করার পর্যায়, আর ক্বাজার পর্যায় হচ্ছে কাজের সমাপ্তি ও চূড়ান্ত বাস্তবায়নের পর্যায়।[৭]

জ্ঞানগত ও বস্তুগত ক্বাজা ও ক্বাদার=

ক্বাজা ও ক্বাদার দুইভাগে বিভক্ত হয়ে থাকে:

জ্ঞানগত ক্বাজা ও ক্বাদার

আরও দেখুন: আল্লাহর জ্ঞানের সাথে মানুষের এখতিয়ারের সম্পর্ক জ্ঞানগত ক্বাজা ও ক্বাদার বলতে বুঝায় যে, আল্লাহ আগে থেকেই জানেন প্রতিটি ঘটনা কখন, কোথায় এবং কি পরিস্থিতিতে ঘটবে। আল্লাহর এই জ্ঞানের মধ্যে রয়েছে, প্রতিটি ঘটনার ভূমিকা, উৎপত্তির কারণ এবং নিশ্চিত সংঘটনের বিষয়ে জ্ঞান। এ জাতীয় জ্ঞান, জ্ঞানগত ক্বাজা ও ক্বাদার নামে পরিচিত।

মানুষের আমল (কর্ম) ও পছন্দ সম্পর্কে আল্লাহর জ্ঞান, তাদের এখতিয়ারের সাথে পরস্পর বিরোধী নয়। আল্লাহ জানেন যে, প্রত্যেক ব্যক্তি তার নিজের ইচ্ছা ও পছন্দ অনুযায়ী কোন পথ বেছে নেবে; সে পাপের দিকে যাবে নাকি সৎকর্মের পথ বেছে নেবে। এই স্বাধীন কর্মের ফলাফল এবং এর পরিণতিও আল্লাহর জ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত। এভাবে, মানুষের পছন্দ এবং কাজকর্ম সম্পর্কে আগে থেকেই আল্লাহর জ্ঞান, তাদের এখতিয়ার বা স্বাধীনতার বিষয়কে অস্বীকার করে না বরং এটি বিশ্বের কার্যকারণ ও এখতিয়ার ব্যবস্থার উপর আল্লাহর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের প্রতি নির্দেশ করে।[৮]

বস্তুগত ক্বাজা ও ক্বাদার

বিশ্বের সমস্ত সৃষ্টি, বিশেষ করে মানুষ এবং অন্যান্য ঘটনাবলি, নির্দিষ্ট সীমা, বাধা-নিষেধ এবং বিশেষ বৈশিষ্ট্য দ্বারা আবদ্ধ। বিশ্বে কোন সৃষ্টিই পূর্ণ অসীম নয়; এমনকি মানুষের ঐচ্ছিক কর্মগুলিও নির্দিষ্ট পরিস্থিতি এবং সীমাবদ্ধতায় আবদ্ধ। উদাহরণস্বরূপ, মানুষ তার হাত বা চোখ দিয়ে কথা বলতে পারে না এবং কথা বলার ক্ষেত্রে তার কণ্ঠনালি, জিহ্বা, দাঁত এবং ঠোঁটের প্রয়োজন।

বস্তুগত ক্বাজা ও ক্বাদার বলতে প্রতিটি ঘটনার মাত্রা, সীমা এবং বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ, যা একটি নির্দিষ্ট শর্ত পূরণের মাধ্যমে সংঘটিত হয়। এক্ষেত্রে, আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত নিয়তির মধ্যে সত্তাগত বৈশিষ্ট্য এবং বাস্তবায়নের শর্তাবলি অন্তর্ভুক্ত; যেমন প্রতিটি সত্তা কী বৈশিষ্ট্য নিয়ে এবং কোন সময় ও কোন স্থানে অস্তিত্ব লাভ করবে।[৯]

তথ্যসূত্র

  1. আল-তাবারানী, আবু আল-কাসিম (১৪১৫)। আল-মুজাম আল-কবীর গ. ৩. কায়রো: ইবনে তাইমিয়া স্কুল। পি. 58.
  2. রাগেব এসফাহানি, হোসেন। কোরানের শব্দভান্ডার। পি. ৪০৬।
  3. মিসবাহ ইয়াজদি, মোহাম্মদ তাগি। দর্শন শেখানো। গ. ২. পি. ৪০৮।
  4. মিসবাহ ইয়াজদি, মোহাম্মদ তাগি। ধারণার শিক্ষা। গ. ১. পি. ১৮০।
  5. হালি, হাসান। অর্থের আবিষ্কার। কওম: ইসলামিক পাবলিশিং ইনস্টিটিউট। পি. ৩১৫।
  6. মিসবাহ ইয়াজদি, মোহাম্মদ তাগি। ধারণার শিক্ষা। গ. ১. পি. ১৮০।
  7. মিসবাহ ইয়াজদি, মোহাম্মদ তাগি। ধারণার শিক্ষা। গ. ১. পি. ১৮০।
  8. খাইদানি, লীলা (২০০৮)। "সাদর আল-মালতাহিনের দৃষ্টিকোণ থেকে ঐশ্বরিক পূর্ব জ্ঞান এবং পূর্বনির্ধারণ এবং স্বাধীন ইচ্ছার সাথে কাদা এবং কদরের সম্পর্ক"। দার্শনিক প্রতিফলন (২): ১৫৯-১৬০।
  9. সোবহানী, জাফর। ধর্মতাত্ত্বিক বক্তৃতা। কওম। পি. ২২৬-২২৭।