মৃত ব্যক্তি দাফন অনুষ্ঠানে শরীক হওয়ার ফযিলত
মৃত ব্যক্তির দাফন অনুষ্ঠানে শরীক হওয়া, মৃত্য ব্যক্তি অথবা জানাযায় অংশগ্রহণকারীদের ক্ষেত্রে কি কোন ফযিলত বয়ে আনে?
মৃত ব্যক্তির দাফন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের মৃত্যু এবং পরকালের কথা মনে পড়বে- এমন দৃষ্টিকোন থেকে জানাযায় বা মৃত ব্যক্তির দাফন অনুষ্ঠানে শরীক হওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে বলে মনে করা হয়। এছাড়াও মৃত ব্যক্তির দাফন অনুষ্ঠানের অন্যতম একটি ফায়দা হিসেবে সওয়াবের কথা বলা হয় যা উক্ত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের এবং মৃত ব্যক্তির নসীবে হয়। মহানবি (স.) জানাযার অনুষ্ঠানে শরীক হওয়ার উপদেশ প্রদান করেছেন। কারণ তিনি মনে করতেন, এই বিষয়টি মানুষকে পরকালের কথা স্মরণ করিয়ে দেবে। ইমাম জাফার সাদিক (আ.) স্বজন হারানো ব্যক্তিদেরকে উপদেশ দিয়েছেন অন্যদেরকে মৃত্য ব্যক্তির মৃত্যুর খবর সম্পর্কে অবহিত করতে যাতে করে মৃত ব্যক্তির দাফন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে সক্ষম হয়, তার উপর নামায পড়তে পারে এবং এরূপভাবে তাদের জন্য নেকী হাসিল হয় এবং মৃত ব্যক্তির জন্য ইস্তিগফার অর্জিত হয়।
মৃত্যু ও পরকালের স্মরণ
কিছু কিছু রেওয়ায়েতে মৃত ব্যক্তির দাফন অনুষ্ঠানের ফায়েদা হিসেবে মৃত্যু ও আখেরাতের কথা স্মরনে আসাকে গণ্য করা হয়েছে; মহানবি (স.) জানাযার অনুষ্ঠানে শরীক হওয়ার উপদেশ দিয়েছেন; কেননা এই বিষয়টি মানুষকে মৃত্যু ও পরকালের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। রেওয়ায়েত অনুসারে, স্বয়ং মহানবি (স.) যখন মৃত ব্যক্তির দাফন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতেন, অত্যন্ত শোকাহত হতেন এবং খুব কম কথা বলতেন।[১]
{{جعبه نقل قول| عنوان = | نقلقول = [[ইমাম জাফর সাদিক (আ.):
মৃত ব্যক্তির দাফন অনুষ্ঠানের সময় চিন্তা করো যে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তোমাকে পূণরায় দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। এখন দেখ কিভাবে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারো।.»[২]| منبع = | تراز = چپ| عرض = ۲۳۰px| اندازه خط = 14px|رنگ پسزمینه =#FFF9E7| گیومه نقلقول =| تراز منبع = چپ}}
- ওলিমার অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার চেয়ে মৃত ব্যক্তির দাফন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়াকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করতেন। কেননা, মৃত ব্যক্তির দাফন অনুষ্ঠান মানুষকে মৃত্যু ও আখেরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।[৩]
মহানবি (স.) মৃত ব্যক্তির জানাযা অনুষ্ঠান সম্পর্কে আবুযার গাফ্ফারিকে বিভিন্ন উপদেশ দিয়েছেন এবং তাকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে যখনই কোন জানাযার পিছন পিছন হাটবে তখন তোমার চিন্তাশক্তি যেন একাগ্রতার সহিত ঐ দিকে মশগুল থাকে এবং জেনে রেখ তুমিও তার সাথে সম্পর্কযুক্ত হবে।[৪]
ইমাম আলী (আ.) হযরত ইমাম আলী (আ.) জনৈক মৃত ব্যক্তির জানাযা অনুষ্ঠানে এক ব্যক্তির হাসির শব্দ শুনতে পেলেন এবং বললেন:
- “মনে করেছ এই দুনিয়ায় শুধুমাত্র অন্যদের জন্য মৃত্যু নির্ধারণ করা হয়েছে”।উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগের ক্ষেত্রে</ref>
ট্যাগ যোগ করা হয়নি
- “মনে করেছ এই দুনিয়ায় শুধুমাত্র অন্যদের জন্য মৃত্যু নির্ধারণ করা হয়েছে”।উদ্ধৃতি ত্রুটি:
দাফনকারী ও দাফন কৃত ব্যক্তির গুনাহসমূহ মাফ হওয়া
মৃত ব্যক্তির দাফন অনুষ্ঠানের অন্যতম একটি ফায়দা হিসেবে সওয়াবের কথা বলা হয় যা উক্ত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের নসীবে হয়।[৫] এছাড়াও হযরত ইমাম বাকের (আ.) হতে বর্ণিত রেওয়ায়েত অনুসারে, মৃত ব্যক্তির জানাযায় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের ৪টি শাফাআত নসীব হয়[৬] এবং ফেরেস্তারা মৃত ব্যক্তির দাফন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদেরকে বেহেশতের প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন।[৭]
অপর একটি রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে, যে বক্তি কোন মু’মিনের লাশ দাফন হওয়া পর্যন্ত সাথে থাকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কিয়ামত দিবসে তার জন্য ৭০ জন ফেরেস্তাকে নিযুক্ত করবেন যারা ঐ ব্যক্তির সাথে থাকবে এবং তার জন্য ইস্তিগফার করবে।[৮]
ইমাম জাফার সাদিক (আ.) স্বজন হারানো ব্যক্তিদেরকে উপদেশ দিয়েছেন অন্যদেরকে মৃত্য ব্যক্তির মৃত্যুর খবর সম্পর্কে অবহিত করতে যাতে করে মৃত ব্যক্তির দাফন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে সক্ষম হয়, তার উপর নামায পড়তে পারে এবং এরূপভাবে তাদের জন্য নেকী হাসিল হয় এবং মৃত ব্যক্তির গুনাহ মাফ হয়।[৯] ইমাম বাকের (আ.) একটি রেওয়ায়েতে উল্লেখ করেছেন গুনাহ মাফ হচ্ছে তাদের উপহার যারা তাকে দাফন করেছে।[১০]
মৃত ব্যক্তির দাফন অনুষ্ঠানের মূল হিসেবে মানুষত্বের মূল্যায়নকে উল্লেখ করা হয়েছে। বিভিন্ন সূত্রসমূহের উল্লেখ অনুসারে, একদা মহানবি (স.) ও তাঁর সাহাবাগণ বসে ছিলেন, এমতাবস্থায় একজন মৃত ব্যক্তির লাশ নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। মহানবি (স.) ও তাঁর সঙ্গী-সাথীরা উঠে দাঁড়িয়ে থাকলেন, যতক্ষণ না ঐ লাশ সেই স্থান থেকে নিয়ে যাওয়া হলো। মহানবি (স.) কে বলা হলো ঐ ব্যক্তি ছিল একজন ইহুদি এবং ঐ লাশের প্রতি মহানবি (স.) এর সম্মান প্রদর্শনের কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো। মহানবি (স.) উত্তরে বললেন, সে কী মানুষ ছিল না?![১১]
তথ্যসূত্র
- ↑ শেখ আব্বাস কুমি, সফিনাতুল বিহার, নাশরে আসওয়াহ, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫৬৫।
- ↑ হোসেইনী তেহরানি, মাআদ শেনাসি, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৩৪।
- ↑ আল্লামা মাজলিসি, বিহারুল আনোয়ার, ১৪০৩ হিজরি, খণ্ড ৭৮, পৃষ্ঠা ২৮৪।
- ↑ তাবরাসি, মাকারিমুল আখলাক, ১৪১২ হিজরি, পৃষ্ঠা ৪৬৫।
- ↑ আল-আনওয়ার আন-নুমানিয়া, পৃষ্ঠা ২২০।
- ↑ কুমি, শেখ আব্বাস, সফিনাতুল বিহার ওয়া মাদিনাতুল হিকম, নাশরে আসওয়াহ, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫৬৫।
- ↑ কুলাইনি, আল-কাফি, ১৪০৭ হিজরি, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ১৭২।
- ↑ মুহাম্মদ বাকির মাজলিসি, যাদুল মাআদ, পৃষ্ঠা ৫৪ ও ৫৫।
- ↑ তাবরাসি, মাকারিমুল আখলাক, ১৪১২ হিজরি, পৃষ্ঠা ৩৬০।
- ↑ কুলাইনি, আল-কাফি, ১৪০৭ হিজরি, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ১৭২।
- ↑ বিহারুল আনোয়ার, খণ্ড ১৮, পৃষ্ঠা ২৫৪।