পারিবারিক শান্তির জন্য কুরআন প্রস্তাবিত উপায়সমূহ

Wahidshia (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০২:৩১, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (ابرابزار)
প্রশ্ন

পারিবারিক শান্তি ও সুখ অর্জনের জন্য কুরআন প্রস্তাবিত উপায়সমূহ কি কি?

কুরআন, পারিবারিক শান্তি অর্জনের জন্য মাওয়াদ্দাত ও রহমতসহ বিভিন্ন উপায়ের পরামর্শ দিয়েছে, যার অর্থ হচ্ছে পারস্পরিক ভালবাসা এবং একে অন্যের প্রতি অনুগ্রহ করা। এছাড়াও একে অন্যের পাশে থেকে পরিপূর্ণতার দিকে এগিয়ে যাওযা, অর্থনৈতিক সচ্ছলতা এবং আল্লাহকে স্মরণ করার মাধ্যমে মানসিক শান্তি লাভ হচ্ছে কুরআনের অন্যান্য পরামর্শ।

বিবাহ ও পরিবার গঠনের মূল লক্ষ্য হিসেবে কুরআনে শান্তি অর্জনকে বিবেচনা করে: (তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য হতেই তোমাদের সঙ্গিণী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তার কাছে শান্তি লাভ করতে পার, আর তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন।) (সূরা রূম: আয়াত ২১) বিবাহের মাধ্যমে আত্মিক ও জীবনযাত্রায় শান্তি থাকা আবশ্যক।[১]

আল্লাহর স্মরণে মানসিক শান্তি

আল্লাহর স্মরণে মানসিক শান্তি পরিবার এবং সমাজ আল্লাহকে স্মরণের মাধ্যমে শান্তি অর্জন করতে পারে: ﴾أَلا بِذِکْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ؛ জেনে রাখো, শুধুমাত্র আল্লাহকে স্মরণ করার মাধ্যমেই অন্তরসমূহ প্রশান্তি লাভ করে﴿(আয়াত:২৮)

মহব্বত এবং সহানুভূতি

কুরআনের সংস্কৃতিতে নারীর ভূমিকা হচ্ছে মানুষের চেহারায় ঐশ্বরিক সৌন্দর্যর বহিঃপ্রকাশ।[২] কুরআন, নারী ও পুরুষের শান্তি এবং সুখকে মাওয়াদ্দাতের আকারে প্রেম ও রহমত হিসেবে অনুগ্রহ অর্থে বর্ণনা করছে: তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য হতেই তোমাদের সঙ্গিণী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তার কাছে শান্তি লাভ করতে পার, আর তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন।﴿(আয়াত:২১) তাফসীরে নেমুনেহ’তে "মাওয়াদ্দাত" এবং "রহমতকে" মানব সমাজের মধ্যে সংযোগের বিন্দু হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।[৩] এই আয়াতে মাওয়াদ্দাতের অর্থ হচ্ছে এই যে, পরস্পরের প্রতি যেন ভালবাসা থাকে এবং রহমতের অর্থ হচ্ছে এই যে, উভয় পক্ষই যেন একে অপরের প্রতি অনুগ্রহশীল হয়।[৪] ঐশ্বরিক মাওয়াদ্দাত এবং রহমত নারী ও পুরুষের সহজাত ঝোঁক (যা পশুদের মধ্যেও বিদ্যমান রয়েছে) ছাড়াও অন্য কিছু।[৫]

একসাথে পরিপূর্ণতার দিকে এগিয়ে যাওয়া

কুরআন, স্বামী ও স্ত্রী’র একসাথে পরিপূর্ণতা লাভের দিকে এগিয়ে যাওয়ার বিষয়টিকে পারিবারিক শান্তি হিসেবে বিবেচনা করে: ﴾هُنَّ لِباسٌ لَکُمْ وَ أَنْتُمْ لِباسٌ لَهُنَّ؛ তারা তোমাদের জন্য পোশাকস্বরূপ এবং তোমরা তাদের জন্য পোশাকস্বরূপ।﴿(আয়াত:১৮৭)

পরস্পরের দোষ ত্রুটিগুলোকে ঢেকে রাখা, একে অপরের গোপনীয়তা রক্ষা করা, পরস্পরকে বিপদ আপদ থেকে সুরক্ষিত রাখা, মানসিক শান্তি যোগানো, জীবনে বৈচিত্র্য দান এবং পোশাকের ন্যায় জীবনের বিভিন্ন দিক থেকে একে অপরের জন্য মানানসই হওয়া, পারিবারিক সুখ ও শান্তির ক্ষেত্র প্রস্তুত করে।[৬]

অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা

পারিবারের ভিত্তি মজবুত ও সুসংহত করার ক্ষেত্রে অর্থনীতি অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। কুরআন, সুস্থ ও নিরাপদ অর্থনীতিকে পরিবারিক কাঠামোতে অন্তর্ভূক্ত করেছে। বিবাহের দেনমোহর এবং তা প্রদানের উপর গুরুত্বারোপ[৭], জীবনের ভরণপোষণ যোগানো[৮], বিবাহগুলোতে ইয়াতিমদের সম্পত্তির দিকটি বিবেচনায় রাখা[৯], উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের বৈধ অংশের প্রতি লক্ষ্য রাখা[১০], নারীর অর্থনৈতিক স্বাধীনতার প্রতি লক্ষ্য[১১], ইয়াতিমদের উত্তরাধিকার হস্তান্তরের পূর্বে তাদের অর্থনৈতিক পরিপক্কতার মূল্যায়ন[১২] অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আমানত হিসেবে ইয়াতিমদের সম্পত্তির প্রতি লক্ষ্য রাখা[১৩] প্রভৃতি বিষয়গুলো কুরআনের অর্থনৈতিক আলোচনাসমূহের মধ্যে রয়েছে।

তথ্যসূত্র

  1. কারাআতি, মোহসেন, তাফসিরে নুর, কুম, মুআসসাসাতে দার রাহে হক, প্রথম সংস্করণ, ১৩৭৫ হিজরি শামসি, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ২৫৫।
  2. জাওয়াদি আমুলি, আবদুল্লাহ, জান দার আয়িনায়ে জালাল ও জামাল, তেহরান, নাশরে ফারহাঙ্গি রাজা, দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৩৭১ হিজরি শামসি, পৃষ্ঠা ৩৭।
  3. মাকারেম শিরাজি, নাসের, তাফসিরে নমুনে, তেহরান, দারুল কুতুব আল-ইসলামিয়া, ১৩৭৪ হিজরি শামসি, খণ্ড ১৬, পৃষ্ঠা ৩৯২।
  4. হোসেইনি শিরাজি, সাইয়িদ মুহাম্মদ, তাবইনুল কুরআন, বৈরুত, দারুল উলুম, ১৪২৩ হিজরি, পৃষ্ঠা ৪১৮।
  5. জাওয়াদি আমুলি, আবদুল্লাহ, জান দার আয়িনায়ে জালাল ও জামাল, তেহরান, নাশরে ফারহাঙ্গি রাজা, দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৩৭১ হিজরি শামসি, পৃষ্ঠা ৪০। আফরুজ, গোলাম আলী, হামসরানে বরতর, তেহরান, আনজুমানে অলিয়া ও মুরাব্বিয়ান, প্রথম সংস্করণ, ১৩৭৭ হিজরি শামসি, পৃষ্ঠা ৩২।
  6. আফরুজ, গোলাম আলী, হামসরানে বরতর, তেহরান, আনজুমানে অলিয়া ও মুরাব্বিয়ান, প্রথম সংস্করণ, ১৩৭৭ হিজরি শামসি, পৃষ্ঠা ৪৬, ৬০, ১৭৯।
  7. সুরা আন-নিসা, আয়াত ৪, ১৯, ২১।
  8. সূরা আল-বাকারা, আয়াত ২৩৩; সূরা আন-নিসা, আয়াত ৩৪।
  9. সূরা আন-নিসা, আয়াত ২-৩।
  10. সূরা আন-নিসা, আয়াত ৩৩, ১৭৬।
  11. সূরা আন-নিসা, আয়াত ৩২।
  12. সূরা আন-নিসা, আয়াত ৬।
  13. সূরা আন-নিসা, আয়াত ৯-১০।

টেমপ্লেট:تکمیل مقاله