মন্দকে ভালোয় রূপান্তর

Wahidshia (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২২:২১, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (ابرابزار)

টেমপ্লেট:سوال পবিত্র কুরআনে বর্ণিত মন্দকে ভালোয় রূপান্তর করার অর্থ কী?


মন্দকে ভালোয় রূপান্তর পবিত্র কুরআনে বর্ণিত এমন একটি ধারণা যেখানে মুমিন ব্যক্তি ইমান আনা (বিশ্বাস স্থাপন করা) ও তওবা করার মাধ্যমে তার মন্দ কাজগুলিকে সৎকর্ম, ভালো কাজে এবং আল্লাহর আনুগত্য ও ইবাদতের মাধ্যমে পুণ্যে রূপান্তরিত করে। এটি এই অর্থও বহন করে যে, তার মন্দ কাজ এবং এর প্রভাবগুলি সৎকর্ম ও ভালো কাজের কারণে ক্ষমা করা হয়।

মন্দসমূহ (سیئات) ও উত্তমসমূহ (حسنات) অর্থ

পবিত্র কুরআনের আয়াত অনুযায়ী, মন্দ কাজ (سیئات) হল এমন গোনাহ যা আল্লাহ বান্দাদের সৎকর্মের মাধ্যমে ক্ষমা করে থাকেন।[১] আল্লামা তাবাতাবাঈ পবিত্র কুরআনে উল্লিখিত মন্দ কাজকে (سیئات) ছোট গোনাহ হিসেবে বিবেচনা করেন।[২]

সূরা আলে ইমরানের ১৯৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে: ﴾فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَکَفِّرْ عَنَّا سَیِّئَاتِنَا؛ অতএব আমাদের গোনাহ ক্ষমা করুন এবং আমাদের মন্দসমূহকে মোচন করুন﴿। এটি থেকে প্রতীয়মান হয় যে, গোনাহসমূহ ذُنُوب ও মন্দসমূহের سیئات মধ্যে পার্থক্য রয়েছে এবং মন্দসমূহ খারাপ স্বভাব ও কর্মের প্রতি ইঙ্গিত করে। সমস্ত আয়াত বিবেচনা করে, মন্দ কাজ শব্দটি শাস্তিযোগ্য গোনাহ[৩] ও এর প্রভাব উভয় অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে।

কিছু তাফসিরকারক سیئات (মন্দসমূহ) ও ذُنُوب (গোনাহসমূহ) পার্থক্য ব্যাখ্যা করে বলেছেন যে, গোনাহ হল সেই কর্মগুলি যা শক্তি হিসেবে বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে এবং আখিরাতে মূর্ত রূপ ধারণ করবে, আর মন্দসমূহ হল অন্যায়ের বাহ্যিক প্রভাব যেমন হৃদয়ের কালিমা, সম্মানহানি, দুনিয়াবি শাস্তি।[৪] কেউ কেউ বলেছেন যে, মন্দসমূহ বলতে মানুষের কৃত কর্মগুলিকে বোঝায় না, বরং এর দ্বারা মানুষের আত্মা ও মনের উপর পড়া খারাপ প্রভাবকে বোঝায়।[৫]

মন্দকে ভালোয় রূপান্তর

পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে সৎকর্ম করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে যাতে سیئات (মন্দসমূহ) দূর হয়: ﴾إِنَّ الْحَسَنَاتِ یُذْهِبْنَ السَّیِّئَاتِ؛ নিশ্চয়ই সৎকর্মসমূহ মন্দসমূহকে দূর করে দেয়﴿(হুদ:১১৪)। আল্লামা তাবাতাবাঈ এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন যে, নামাজ অন্তরে মন্দ কাজের প্রভাব মুছে ফেলে।[৬] তাফসিরকারীগণ আয়াতে উল্লিখিত সৎকর্মকে সকল প্রকার ভালো কাজ হিসেবে বিবেচনা করেন।[৭] নামাজ ছাড়াও, সূরা আলে ইমরানের ১৯৫ নং আয়াতে হিজরত, আল্লাহর পথে কষ্ট সহ্য করা এবং শহীদ হওয়াকে এমন কাজ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে যার কারণে আল্লাহ মন্দ কাজকে মুছে ফেলেন। অন্যত্র, কবিরা গোনাহ থেকে বিরত থাকাও মন্দ কাজ মোচনের কারণ হিসেবে উল্লিখিত হয়েছে।[৮] তাফসীরে মাজমাউল বায়ানে সূরা ফুরকানের ৭০ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় একটি হাদিস উল্লেখ করা হয়েছে, যা দেখায় যে মন্দকে ভালোয় রূপান্তরের অর্থ হল আল্লাহ বান্দার গোনাহ মুছে ফেলেন এবং তার স্থানে নেকি লিপিবদ্ধ করেন।[৯]

মন্দকে ভালোয় রূপান্তরের অন্যান্য ব্যাখ্যাও দেওয়া হয়েছে। যেমন, আল্লাহ তওবার মাধ্যমে পূর্বের গোনাহগুলি মুছে ফেলেন, মানুষের খারাপ স্বভাবকে ভালো স্বভাবে পরিবর্তন করেন, অথবা এর দ্বারা পুরস্কার ও শাস্তি বোঝানো হয়েছে। তবে আল্লামা তাবাতাবাঈ মনে করেন যে, আয়াতের বাহ্যিক অর্থ অনুযায়ী মন্দ কাজ সৎকর্মে রূপান্তরিত হয়।[১০]

সূরা রাদের ২২ নং আয়াত এবং সূরা কাসাসের ৫৪ নং আয়াতে মন্দকে ভালোয় রূপান্তর দুই অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। একটি হল নিজের মন্দকে ভালোয় রূপান্তর করা, আর অন্যটি হল অন্যের মন্দকে নিজের ভালো দ্বারা প্রতিহত করা: ﴾وَیَدْرَءُونَ بِالْحَسَنَةِ السَّیِّئَةَ؛ এবং তারা মন্দকে ভালো দ্বারা প্রতিহত করে﴿(রাদ:২২)।

পবিত্র কুরআনে মন্দকে ভালোয় রূপান্তরের ধারণাটি দেখায় যে, মানুষ সৎকর্মের মাধ্যমে তার অতীতের গোনাহগুলি সংশোধন করে এবং এই উর্ধ্বমুখী যাত্রায় একজন পাপী মানুষ থেকে পবিত্র ও তাকওয়াসম্পন্ন মানুষে পরিণত হয়। এই কারণে আল্লাহ তার সমস্ত পাপ ক্ষমা করেন, শাস্তি তুলে নেন এবং উত্তম পুরস্কার দান করেন।

তথ্যসূত্র

  1. মাকারেম শিরাজি, নাসের, তাফসিরে নমুনা, তেহরান, দার আল-কুতুব আল-ইসলামিয়া, চাপে দহম, ১৩৭১ শামসি, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ২২২।
  2. তাবাতাবাই, মোহাম্মাদ হোসেইন, আল-মিজান ফি তাফসির আল-কুরআন, তরজুমান: মোহাম্মাদ বাকের মুসাভি হামাদানি, কুম, দফতারে ইনতেশারাতে ইসলামী, চাপে পঞ্চম, ১৩৭৪ শামসি, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ১৩৯।
  3. সূরা আনকাবুত, আয়াত ৭।
  4. কুরায়শী, আলী আকবর, কামুস আল-কুরআন, তেহরান, দার আল-কুতুব আল-ইসলামিয়া, চাপে শষ্ঠম, ১৩৭১ শামসি, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ১১০।
  5. মাকারেম শিরাজি, তাফসিরে নমুনা, খণ্ড ১৫, পৃষ্ঠা ১৬১।
  6. তাবাতাবাই, মোহাম্মাদ হোসেইন, আল-মিজান, খণ্ড ১১, পৃষ্ঠা ৭৮।
  7. সৈয়দ কুতুব, ফি জিলাল আল-কুরআন, বৈরুত, দার আল-শুরুক, চাপে সিও পঞ্চম, ১৪২৫ হিজরি, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ১৯৩২।
  8. সূরা নিসা, আয়াত ৩১।
  9. তাবরসি, ফাজল ইবনে হাসান, মাজমা আল-বায়ান, তরজুমা: গোরুহি আজ মোতর্জেমান, তেহরান, ফারাহানি, চাপে আউওয়াল, বি-তা, খণ্ড ১৭, পৃষ্ঠা ২২৬।
  10. তাবাতাবাই, আল-মিজান, খণ্ড ১৫, পৃষ্ঠা ৩৩৫।

টেমপ্লেট:تکمیل مقاله