আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে উসিলা বানানো

WikiPasokh থেকে
Zarvandi (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১২:৩৯, ২৭ মে ২০২৩ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)
প্রশ্ন

নবি ও মাসুম (আ.)-গণকে উসিলা বানানো কি জায়েয?


মুসলিমগণ আল্লাহ্ ব্যতীত অপর কাউকে উসিলা বানানোর বিষয়টি ঐ শর্তে সঠিক বলে মনে করে যখন তা আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের পথে হয়ে থাকে। এছাড়াও, সাধারণ মুসলমান ও মুসলিম আলেমগণের কর্মপদ্ধতিও এমন ছিল যে, তারা মাসুমীন (আ.)-কে উসিলা বানাতেন।

আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কাউকে উসিলা বানানো বলতে এখানে নবি ও ইমাম (আলাইহিমুস সালাম)-গণকে উসিলা বানানোর কথা বোঝানো হয়েছে; আল্লাহর নৈকট্য লাভের নিমিত্তে করা এই ধরনের তাওয়াসসুল ও আবেদন সম্পর্কে কুরআন ও হাদীসে বিশেষ তাগিদ প্রদান করা হয়েছে।

উসিলা গ্রহণের আবশ্যকতা

নির্দিষ্ট কোন ফলাফলে পৌঁছানোর লক্ষ্যে উসিলা তথা মাধ্যমের শরণাপন্ন হওয়া একটি অবধারিত বিষয়, এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। আধ্যাত্মিক উচ্চ মাকামে পৌঁছানোর লক্ষ্যে মহান আল্লাহ্ বিভিন্ন উসিলা নির্ধারণ করেছেন, মানুষ সেগুলোর শরণাপন্ন হয়ে সুউচ্চ মাকামে পৌঁছুতে পারে। এরই ভিত্তিতে পবিত্র কুরআনে এসেছে: ﴾یا اَیُّهَا الَّذینَ آمَنُوا اتَّقُوا اللّهَ وَ اتْبَغُوا اِلیهِ الوَسیلَه وَ جاهِدُوا فی سَبیلِهِ لَعَلَّکُم تُفلِحوُن ওহে যারা ঈমান এনেছ! আল্লাহ্‌কে ভয়-শ্রদ্ধা করো, আর তাঁর দিকে উসিলা অন্বেষণ করো, আর তাঁর পথে জিহাদ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো।﴿(মায়িদাহ:৩৫)

কুরআন ও হাদীসে আল্লাহ ব্যতীত অপরকে উসিলা বানানো

‘উসিলা’ হলো, যা কিছু মানুষকে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে সহায়তা করে; এটা কখনো স্বয়ং মানুষের সাথে সম্পৃক্ত যেমন- তার জ্ঞান ও অবগতি, নামাজ, রোজা, হজ্জ, যাকাত, আল্লাহর পথে জিহাদ ইত্যাদি অথবা যাঁরা এ পথে মানুষের হাত ধরে উন্নতির পথে ধাবিত করেন তাঁদের সাথে সম্পৃক্ত। এ কারণে সূরা মায়িদার ৩৫নং আয়াতের তাফসীরে ইমাম আলী (আ.) বলেছেন: ((اَنَا وَسیلَتُهُ)) আমি হচ্ছে তার (প্রতি) উসিলা।[তাবাতাবাঈ, সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ হুসাইন, তাফসীরুল মীযান, খ. ৫, পৃ. ৩৩৩ ] আরও বলেছেন: ((تَقَرَّبُوا اِلیهِ بِالاِمام)) ‘ইমামের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করো।’

পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াতেও পূর্ববর্তী নবিগণ (আ.)-এর তাওয়াসসুলের দৃষ্টান্ত উল্লেখিত হয়েছে; যেমন: হযরত আদম (আ.) আহলে বাইত (আ.)-কে উসিলা বানিয়েছিলেন (বাকারাহ : ৩৭), হযরত ইয়াকুব (আ.)-এর প্রতি হযরত ইউসুফ (আ.)-এর ভ্রাতাগণের তাওয়াসসুল; হযরত ইউসুফ (আ.)-এর ভ্রাতাগণ নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে পিতার কাছে এসে তাদের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে ইস্তাগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) করার অনুরোধ করলে, জবাবে হযরত ইয়াকুবও (আ.) তাদের জন্য ইস্তিগফার করার প্রতিশ্রুতি দিলেন: ﴾قَالُوا يَا أَبَانَا اسْتَغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا إِنَّا كُنَّا خَاطِئِينَ قَالَ سَوْفَ أَسْتَغْفِرُ لَكُمْ رَبِّي ۖ إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ

তারা (ইয়াকুবের সন্তানরা) বললো: হে আমাদের পিতা! আমাদের গুনাহসমূহের মাফির জন্য প্রার্থনা করুন, নিঃসন্দেহে আমরাই দোষী। তিনি (ইয়াকুব) বললেন: আমি শিঘ্রই আমার প্রতিপালকের নিকট তোমাদের জন্য ক্ষমা চাইবো, নিশ্চয়ই তিনি অতি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।﴿(ইউসুফ:৯৭ ও ৯৮।)

নবি ও ইমাম (আ.)-গণের প্রতি তাওয়াসসুল মহানবি (স.)-এর প্রতি তাওয়াসসুলের বিষয়টি তাঁর জীবদ্দশাতেও ছিল এবং তাঁর ইন্তেকালের পরও রয়েছে। অনেকে মহানবি (স.)-এর কাছে এসে সাহায্য চাইতেন অথবা ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন করতেন এবং তাদের চাওয়া পূরণও হতো; বর্ণিত আছে, জনৈক বেদুঈন আরব মহানবির (স.) কাছে এসে কয়েক পংক্তি কবিতা আবৃতির পর আল্লাহর রাসূল (স.)-এর উসিলা দিয়ে মহান আল্লাহর নিকট বৃষ্টি প্রার্থনা করলেন। তার কবিতার শেষ লাইনটি এমন ছিল যে, ‘তোমার দিকে ধাবমান হওয়া ছাড়া আমাদের সামনে আর কোন পথ খোলা নেই, আল্লাহর নবির শরণাপন্ন হওয়া ব্যতীত মানুষ আর কোথায় বা যেতে পারে?’ মহানবি (স.) অত্যন্ত ভারাক্রান্ত হৃদয়ে মিম্বরে উপবেশন করে দোয়া করলেন, অতঃপর প্রচুর বৃষ্টিপাত হলো।[কাশফুল ইরতিয়াব, পৃ. ৩১০।]

একইভাবে সাধারণ মুসলমান এবং মুসলিম আলেমদের কর্মপদ্ধতিও এমন ছিল যে, তারা ইমাম (আ.)-গণকে উসিলা বানাতেন; আর ইমাম হুসাইন (আ.)-এর স্মরণে যে সকল শোক মজলিশ ও আযাদারীর আয়োজন করা হয়, এগুলোও একই ধারাতে।

আধ্যাত্মিক সম্মানের অধিকারী ব্যক্তিদেরকে উসিলা বানানো

মহান আল্লাহর নিকট যে সকল মু’মিন ও সালেহ (সৎকর্মশীর্ল) ব্যক্তিগণ বিশেষ সম্মান ও মাকামের অধিকারী এবং দুনিয়াতে উত্তমরূপে আধ্যাত্মিকতায় পূর্ণ জীবন-যাপন করেছেন, মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জন এবং পার্থিব প্রয়োজন মেটাতে আমরা তাদেরকে আমাদের এবং আল্লাহর মাঝে উসিলা বানাই; মহান আল্লাহকে তাঁদের পবিত্র রুহগুলোর উসিলায় কসম দেই যাতে ঐশী রহমত ও মাগফিরাতের শামিল হতে পারি।[হুসাইনি নাসাব, সাইয়্যেদ রেযা, শিয়া পাসুখ মি দেহাদ, দ্বিতীয় সংস্করণ, পৃ. ১৪৪।]