তাতহিরের আয়াতে উল্লিখিত আহলে বাইত: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

WikiPasokh থেকে
১২ নং লাইন: ১২ নং লাইন:


==আয়াত==
==আয়াত==
{{inline quran|اِنَّما یُریدُ اللهُ لِیُذهِبَ عَنکُمُ الرِّجسَ اَهلَ البَیتِ وَ یُطَهِّرَکُم تَطهیرًا|translation=‘নিশ্চয়ই আল্লারহ ইরাদা হল তোমাদের থেকে সকল প্রকার অপবিত্রতা দূর করা এবং তোমাদেরকে পূর্ণরূপে পূত-পবিত্র রাখা।’}}
{{quran|اِنَّما یُریدُ اللهُ لِیُذهِبَ عَنکُمُ الرِّجسَ اَهلَ البَیتِ وَ یُطَهِّرَکُم تَطهیرًا|translation=‘নিশ্চয়ই আল্লারহ ইরাদা হল তোমাদের থেকে সকল প্রকার অপবিত্রতা দূর করা এবং তোমাদেরকে পূর্ণরূপে পূত-পবিত্র রাখা।’}}
(আহযাব:৩৩)
(আহযাব:৩৩)



১৩:৩০, ২৮ মে ২০২৩ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

প্রশ্ন

তাতহিরের আয়াতে উল্লিখিত আহলে বাইত কারা? মহানবির (স.) পত্নীগণ কি এ আয়াতের অন্তর্ভুক্ত?


তাতহিরের আয়াত পরিচিত

২২ তম পারায় সূরা আহযাবের ৩৩নং আয়াত। আয়াতটি আহলে বাইত (আ.) সম্পর্কে এবং মদিনায় অবতীর্ণ হয়েছে। শিয়াদের দৃষ্টিতে এবং আহলে সুন্নাতের অনেকের মতে আহলে বাইত হল, মুহাম্মাদ (স.), আলী (আ.), ফাতেমা (সা. আ.), হাসান (আ.) ও হুসাইন (আ.)-এর জন্য ‘ইসমে খাস’। শিয়া রেওয়ায়েতসমূহ ও আহলে সুন্নতের কিছু কিছু রেওয়ায়েতে বিষয়টির সমর্থন করা হয়েছে। তাতহিরের আয়াতের (৩৩নং আয়াতের) আগে ও পরের অংশ নবিপত্নীগণ প্রসঙ্গে হলেও মুফাসসিরগণের একটি বড় অংশ নবিপত্নীগণকে আহলে বাইতের (আ.) অন্তর্ভুক্ত বলে মনে করেন না; কেননা নবির (সা.) স্ত্রীগণকে সম্বোধন করা আয়াতে রয়েছে তালাক ও শাস্তির সতর্কবার্তা এবং গৃহের ভেতর অবস্থানের নির্দেশ, অন্যদিকে তাতহিরের (পবিত্রতার ঘোষণা) আয়াতের সম্বোধন হচ্ছে সম্মানের সাথে। আবার ৭টি আয়াতে ব্যবহৃত সর্বনামগুলো হল স্ত্রীবাচক অথচ তাতহিরের আয়াতে যে দু’টি সর্বনাম ব্যবহার করা হয়েছে উভয়ই পুংবাচক। কারো কারো মতে যদি নবিপত্নীগণ আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত হতেন তাহলে স্বয়ং নবিপত্নীগণ বা তাদের ঘনিষ্টজনদের কেউ না কেউ অবশ্যই বিষয়টি উল্লেখ করতেন। অথচ তাদের কেউই এ ফজিলতের প্রতি ইঙ্গিত করেন নি।

আয়াত

(আহযাব:৩৩)

আহলে বাইত শব্দের আভিধানিক ও পারিভাষিক অর্থ

"আহল" শব্দের (একটি) অর্থ হল আসক্তি। ‘বাইত’ অর্থ গৃহ; যেখানে মানুষ আশ্রয় নেয়। মুসলিম সংস্কৃতিতে আহল ও বাইত শব্দদ্বয়ের একসাথে ব্যবহার শিয়া এবং সুন্নি উভয়েরই নিকট খাস অর্থটির গণ্ডি আভিধানিক অর্থের চেয়ে বেশী সীমিত এবং নির্দিষ্ট কিছু লোকের জন্য অধিক প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। শিয়ারা এ আয়াতে উল্লেখিত আহলে বাইত শব্দটিকে পাঁচ জনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত একটি ‘ইসমে খাস’ বলে মনে করে।[১]

নবিপত্নীগণের প্রসঙ্গে উল্লিখিত ৭ আয়াত

আয়াতে তাতহির ঐ ৭ আয়াতের মাঝে এসেছে যেগুলোতে মহানবির (স.) স্ত্রীগণ সম্পর্কে বিভিন্ন বিধান বর্ণনা করা হচ্ছে। তাতহিরের আয়াতের পূর্বের ও পরের আয়াতগুলো মহানবির (স.) স্ত্রীগণ সম্পর্কে এবং এগুলোতে তাদেরকেই সম্বোধন করা হয়েছে। কিন্তু মুফাসসিরগণ তাতহিরের আয়াতটি মহানবির (স.) স্ত্রীদের সাথে সম্পৃক্ত নয় বলে মত দিয়েছেন।

  • নবির (সা.) স্ত্রীগণকে সম্বোধন করা আয়াতগুলোতে রয়েছে তালাক ও শাস্তির সতর্কবার্তা এবং গৃহের ভেতর অবস্থানের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে, অন্যদিকে তাতহিরের (পবিত্রতার ঘোষণা) আয়াতের সম্বোধন হচ্ছে সম্মানের সাথে।
  • নবিপত্নীগণের দিকে ইঙ্গিত করা সকল সর্বনামগুলোই স্ত্রীবাচক, অথচ আয়াতে তাতহীরে ব্যবহৃত সর্বনামগুলো হলে পুংবাচক, আর দু’ধরনের সর্বনাম থেকে প্রমাণিত হয় যে, সর্বনামগুলো ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তিত্বের দিকে প্রত্যাবর্তন করছে।
  • কিছু কিছু গবেষকের মতে আহলে বাইত (আ.) হলেন মহানবির (স.) স্ত্রীগণ, আর এ বিষয়টি ছিল তাদের জন্য সম্মানের। কিন্তু মহানবির (স.) স্ত্রীগণ থেকে এমন কোন বর্ণনা আসেনি যে, তাদের একজনও এ উপাধি নিজের ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছেন এবং এ সম্মানের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণে গর্ব করেছেন। মুয়াবিয়া উম্মুল মু’মিনীনের ভাই (তার বোন উম্মে হাবিবা মহানবির (স.) স্ত্রী ছিলেন) হওয়ার কারণে গর্ব করতো, আর যদি তার বোন আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত হত তবে সে অবশ্যই তা উল্লেখ করত। অথচ এমন কিছু তার সম্পর্কে বর্ণিত হয়নি।[২]

সুন্নি আলেমগণের মত

আহলে সুন্নতের আলেমদের অনেকে আহলে বাইত বলতে যে পাঞ্জাতনকে বোঝানো হয়েছে বিষয়টিকে সমর্থন করেছেন।

  • প্রখ্যাত সুন্নি আলেম ওয়াহেদি আয়াতে তাতহীর মহানবি (স.), আলী (আ.), ফাতেমা (সা. আ.), হাসান (আ.) ও হুসাইন (আ.) এর শানে অবতীর্ণ হয়েছেন বলে মনে করেন। তার বিশ্বাস এক্ষেত্রে অন্য কেউ তাদের মাঝে অন্তর্ভুক্ত নয়।[৩]
  • বিশিষ্ট সুন্নি মুহাদ্দিস সুয়ূতীর বর্ণনার ভিত্তিতে উষ্ট্রের (জামাল) যুদ্ধের পর হযরত আয়েশাকে হযরত আলী (আ.) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি উত্তরে বলেন: তোমরা কি আমার কাছে এমন ব্যক্তি সম্পর্কে প্রশ্ন করছো যে মহানবির (স.) সবচেয়ে প্রিয় মানুষ। আমি নিজেই দেখেছি যে, মহানবি (স.) আলী, ফাতেমা, হাসান ও হুসাইনকে একটি কাপড়ের নিচে একত্রিত করে বললেন: ‘হে আল্লাহ এরা আমার পরিবার (বংশ) ও আমার পৃষ্ঠপোষক এবং এদের থেকে সকল অপবিত্র দূরে সরিয়ে রাখো এবং সকল প্রকার অপবিত্রতা থেকে তাদেরকে পবিত্র রাখো।[৪] এ ঘটনা সহিহ মুসলিম, মুস্তাদরাকে হাকিম, সুনানে বায়হাকি গ্রন্থে হযরত আয়েশা থেকে বর্ণিত হয়েছে। অবশ্য বেশীরভাগ শিয়া মুফাসসির এ হাদীসটিকে উম্মে সালামাহ থেকে বর্ণনা করেছেন এবং তাতহীরের আয়াত উম্মে সালামাহ’র গৃহে অবতীর্ণ হয়েছে বলে মনে করেন।

আরও পড়ুন

তথ্যসূত্র