আহলে সুন্নতের ভাষায় হযরত আলীর (আ.) ফযিলত

WikiPasokh থেকে
Zarvandi (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১২:৪৪, ২৭ মে ২০২৩ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)
প্রশ্ন

: আহলে সুন্নতের দৃষ্টিকোণ থেকে হযরত আলীর (আ.) ফজিলত বর্ণনা করুন


হযরত আলীর (আ.) ফযিলত; শিয়া ও সুন্নি সূত্রসমূহে বর্ণিত হয়েছে। আহলে সুন্নতের মতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আয়াতের শানে নুযুল হযরত আলীর সাথে সম্পৃক্ত, এছাড়া তারা পবিত্র কুরআনে ‘সালেহুল মু’মিনীন’, ‘সাদিকীন’ ও ‘খাইরুল বারিয়াহ’ ইত্যাদি পরিভাষার বাস্তব দৃষ্টান্ত হিসেবে হযরত ইমাম আলীর (আ.) নাম উল্লেখ করেছেন। নির্ভরযোগ্য বিভিন্ন সুন্নি সূত্রে আল্লাহর রাসূল (স.) থেকে হযরত আলীর (আ.) শানে বহু সংখ্যক হাদীস বর্ণিত হয়েছে যেগুলোতে ‘তিনি সর্বদা সত্যের সাথে’ এবং ‘কিয়ামতের দিন জনগণের জন্য তিনি হজ্জাত স্বরূপ’ বলে পরিচয় করানো হয়েছে।

সুন্নি মুফাসসিরদের দৃষ্টিতে পবিত্র কুরআনে ইমাম আলীর (আ.) ফজিলত

সুন্নি মুফাসসিরগণের মতে, পবিত্র কুরআনের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আয়াতে ইমাম আলীর (আ.) ফজিলত বর্ণিত হয়েছে বলে মনে করেন:

  • মহানবি (স.) বলেছেন: আলী ইবনে আবি তালিব পবিত্র কুরআনের কারামাত (মহানুভবতা, উদারতা) সম্পর্কিত সবগুলো আয়াতের অন্তর্ভুক্ত।[মুহাম্মাদ সালেহ হুসাইনি তিরমিযি, মানাকেবে মুর্ত্তাযাভি, পৃ. ১৯, ১৩১২ হিজরীতে বোম্বে প্রকাশিত।]
  • যখন সূরা তাহরিমের ৪নং আয়াত -আল্লাহ, জীবরাইল ও নেককার মু’মিনগণ, তার সাহায্যকারী- অবতীর্ণ হল তখন মহানবি (স.) আলীকে (আ.) নেককার মু’মিন বলে আখ্যায়িত করেন।[ইবনে মাগাযেলী, মানাকেবে আলী ইবনে আবি তালীব, পৃ. ২৬৯, হাদীস নং ৩১৬, মাকতাবাতুল ইসলামিয়্যাহ প্রকাশণী, ১৪০২ হিজরী।]
  • যে আয়াতটিতে মু’মিনদেরকে সত্যবাদীদের সঙ্গী হওয়ার বিষয়ে তাগিদ প্রদান করা হয়েছে।[সূরা তাওবাহ : ১১৯] তার ব্যাখ্যায় মহানবি (স.) বলেছেন এখানে সাদেকীন ও সত্যবাদীগণ হল আলী ও তার সঙ্গীরা।[হাকিম আল-হাসকানী, শাওয়াহেদুত তানযীল, খণ্ড ২, পৃ. ৩৪১, তেহরান, ইরশাদুল ইসলামি প্রকাশনী, ১৪১১ হিজরী।]
  • যখন আয়াত অবতীর্ণ হল এবং মহানবিকে (স.) উম্মতের জন্য সতর্ককারী উল্লেখ করে বলা হল যে, প্রতিটি দলের জন্য হেদায়েতকারী থাকবে।[রাআদ : ৭।] তখন মহানবি (স.) নিজের বুকে হাত রেখে নিজেকে উম্মতের জন্য সতর্ককারী হিসেবে পরিচয় করালেন, অতঃপর আলীর (আ.) দিকে ইঙ্গিত করে তাকে উম্মতের হেদায়েতকারী হিসেবে আখ্যায়িত করলেন।[ইবনে শীরাভাইহ দেইলামি, ফিরদাউসুল আখবার, খণ্ড ১, পৃ. ৭৫, দারুল কুতুবুল আরাবি প্রকাশনী, ১৪০৭ হিজরী।]
  • মহানবি (সা.) থেকে বর্ণিত হাদীসে, হযরত আলীকে (আ.) ‘যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তারাই সৃষ্টির সেরা।’[৭] শীর্ষক আয়াতের বাস্তব দৃষ্টান্ত বলে আখ্যায়িত করেছেন।[শাওয়াহেদুত তানযীল, খণ্ড ২, পৃ. ৪৫৯।]
  • সূরা আ’রাফের ১৮১নং আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর মহানবি (স.) হেদায়েতপ্রাপ্ত দল হিসেবে আলী (আ.) ও তার অনুসারীগণকে পরিচয় করিয়েছেন।[সুলায়মান ইবনে ইব্রাহিম কান্দুযী হানাফী, ইয়ানাবিউল মাওয়াদ্দাহ, খণ্ড ১, পৃ. ১২৮, কোম, শারিফ রাযি প্রকাশনী, ১৪১৩ হিজরী।]
  • وَالسَّابِقُونَ السَّابِقُونَ، أُولئِک الْمُقَرَّبُونَ ‘আর অগ্রগামীগণ তো অগ্রগামী, তারাই নৈকট্যপ্রাপ্ত, নি’মাতে পরিপূর্ণ জান্নাতে’[ওয়াকিয়াহ : ১০-১২] -এ আয়াতগুলো অবতীর্ণ হওয়ার পর মহানবি (সা.) জীবরাইল (আ.) থেকে বর্ণনা করেন যে, এখানে আলী ও তার শিয়া (অনুসারী)-দেরকে বোঝানো হয়েছে, যারা বেহেশতে প্রবেশের ক্ষেত্রে অগ্রগামী হবে এবং মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ করবে।[সিবতে ইবনে জাওযি, তাযকিরাতুল খাওয়াছ, পৃ. ১৭, ইনতেশারাতে নাইনাভা, তেহরান।]
  • ইকমালে দ্বীনের আয়াত, লাইলাতুল মাবিতের আয়াত, রুকুতে যাকাত প্রদানের আয়াত, মুবাহালা’র আয়াত ইত্যাদি ইমাম আলীর (আ.) শানে নাযিল হয়েছে।

ইমাম আলীর (আ.) ফজিলতে বর্ণিত রেওয়ায়েতসমূহ

আহলে সুন্নাতের বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য গ্রন্থে হযরত ইমাম আলীর (আ.) শানে বহু সংখ্যক রেওয়ায়েত উল্লেখিত হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে কয়েকটি এখানে উল্লেখ করা হল:

  • মহানবি (স.) বলেছেন: ‘আমার সাথে আলীর সম্পর্ক হল; যেমন শরীরের সাথে মাথার সম্পর্ক’।[আবু বাকার আহমাদ ইবনে আলী আল-খাতিব বাগদাদী, খণ্ড ৭, পৃ. ১২, তারিখে বাগদাদ বৈরুত, দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ।]
  • মহানবি (স.) থেকে বর্ণিত অপর এক রেওয়ায়েতে আলীকে সর্বোত্তম মানব হিসেবে পরিচয় করানো হয়েছে এবং যে তাকে গ্রহণ না করবে তাকে কাফের বলা হয়েছে।[ফিরদাউসুল আখবার, খণ্ড ৩, পৃ. ৮৯।]
  • মহানবি (স.) তাবুকের যুদ্ধের ঘটনায় মদিনা ত্যাগের প্রাক্কালে তাঁর নিকট ইমাম আলীর (আ.) মর্যাদা প্রসঙ্গে বলেন: আলীর অবস্থান আমার নিকট ঠিক তেমন যেমন ছিল মুসার নিকট হারুনের, শুধু ব্যতিক্রম হল আমার পরে আর কোন নবি আসবে না।[তারিখে বাগদাদ, খণ্ড ১১, পৃ. ৪৩২।]
  • মহানবির (স.) সাথে বসে থাকা আনাস বিন মালিক বর্ণনা করেন, আলী (আ.) এলেন, এ সময় মহানবি (স.) বললেন: ‘কিয়ামতের দিন আমি ও আলী হলাম উম্মতের হুজ্জাত’।[তারিখে বাগদাদ, খণ্ড ২, পৃ. ৮৮।]
  • উম্মুল মু’মিনীন উম্মু সালামাহ থেকে বর্ণিত যে, মহানবি (স.) বলেছেন: যে ব্যক্তি আলীকে গালী দেয় সে আমাকে গালী দিল, আর যে, আমাকে গালী দেয় নিশ্চিতভাবে সে আল্লাহকে গালী দিল।[ইবনে হিসামুদ্দীন হিন্দি, কানযুল উম্মাল, খণ্ড ১১, পৃ. ৬০২, হাদীস নং ৩২৯০৩, বৈরুত, মুআসসাসাতুর রিসালাহ, ১৪১৩ হিজরী।]
  • মহানবি (স.) থেকে ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেন তিনি বলেছেন: ‘আলীর ভালবাসা গুনাহসমূহকে মুছে ফেলে যেভাবে আগুন কাঠকে ধ্বংস করে দেয়।[তারিখে বাগদাদ, খণ্ড ৪, পৃ. ১৯৫]
  • মহানবি (স.) বলেছেন: আলী হল হকের (সত্য) সাথে আর হক হল আলীর সাথে। হাউযে কাউসারে আমার সাথে মিলিত না হওয়া পর্যন্ত এরা পরস্পর থেকে আলাদা হবে না।[ইবনে আবি বাকর হাইসামী, মাজমাউয যাওয়ায়েদ, খণ্ড ৯, পৃ. ১৩৪, বৈরুত, দারুল কুতুবুল আরাবি, ১৪০২ হিজরী।]