ইমাম আলী’র (আ.) ঘরে অবস্থান করার রহস্য

প্রশ্ন

মহানবি (স.) এর ইন্তেকালের প্রথম বছরগুলোতে ইমাম আলী (আ.) কেন গৃহে অবস্থান থাকতেন? তাঁর নীরবতা কী ইসলামের জন্য কল্যাণকর ছিল, নাকি তাঁর সংগ্রাম?

মহানবি (স.) এর ইন্তেকালের পর, ইমাম আলী (আ.) এর ঘরে অবস্থানের বিষয়টিকে ইসলামের সুরক্ষা, মুসলিম সমাজের ঐক্য ও অখণ্ডতা রক্ষার স্বার্থে বলে মনে করা হয়। মহানবি (স.) এর ইন্তেকালের পর মুসলমান সমাজের অবস্থা অত্যন্ত নড়বড়ে হয়ে গিয়েছিল এবং কিছু কিছু জাহেলি ঐতিহ্য পুনরুজ্জীবিত হয়েছিল। আবু সুফিয়ানআব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিবের ন্যায় ব্যক্তিরা ইমাম আলী ইবনে আবি তালিব (আ.)-কে খলিফার সাথে যুদ্ধে প্ররোচিত করার লক্ষ্যে বাইয়াত তথা আনুগত্যের শপথের প্রস্তাবনা উপস্থাপণ করেছিলেন। অভ্যুত্থানের জন্য পর্যাপ্ত সাহায্যকারীর অভাব ও বিভক্তি এড়ানোর লক্ষ্যে ইমাম আলী (আ.) গৃহে অবস্থান করার বিষয়টিকে যথাযথ বিবেচনা করেন।

মুসলমানদের ঐক্যের আবশ্যকতা

অধিকাংশ ঐতিহাসিকের অভিমত হচ্ছে যে, মহানবি (স.) যখন ইন্তেকাল করেছেন তখন ইসলাম নামক আন্দোলনটি ছিল একটি সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুর ন্যায়। আর তখন পর্যন্ত ইসলাম নিয়ে চিন্তা করা মানুষের অধিকাংশই এটিকে হৃদয় থেকে গ্রহণ করেন নি। সুতরাং ঐক্য ও অখণ্ডতা আবশ্যক ছিল।[১] কিছু কিছু ঐতিহাসিক উল্লেখ করেছেন যে মহানবি (স. ) এর মৃত্যুর পর আরব পুর্বাবস্থায় (জাহেলী) প্রত্যাবর্তন শুরু করে এবং মুনাফিকরা প্রকাশ্যে আসে।[২]

মুনাফিকদের সংঘাত সৃষ্টির অপচেষ্টা

মুসলমানদের ঐক্য বিনষ্ট করার সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা ছিল ইমাম আলী (আ.)-কে হুকুমতের নেতৃত্বস্থানীয় পর্যায়ের ব্যক্তিদের সাথে সংঘাতে লিপ্ত করা, আর এ জন্যই আবু সুফিয়ান, আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিবের সম্মতি লাভে সক্ষম হয়ে বনি হাশিমের একটি দল নিয়ে ইমাম আলী (আ.) এর নিকট আসেন এবং তাঁকে বাইয়াত তথা আনুগত্যের প্রস্তাব দেন। আবু সুফিয়ান, আলী (আ.) অনুভূতিকে উস্কে দেওয়ার লক্ষ্যে বলেন: হে আবুল হাসান, এই প্রস্তাবনা গ্রহণের ক্ষেত্রে গাফিলতি করো না, আমরা কবে থেকে নীচু বংশ তাইমের (আবু বকরের বংশ) অনুসারী ছিলাম?[৩]

ইমাম আলী (আ.) উত্তরে তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, “তোমরা ভাল করেই জানো যে, খিলাফতের বিষয়ে আমি অন্য যে কারও চেয়ে অধিকতর যোগ্য, আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কসম যতক্ষণ পর্যন্ত মুসলমানদের বিরূপ পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র আমার উপর অত্যাচার হবে নীরবতা রক্ষা করে চলবো।”[৪] অবশ্য ইমাম যদি পরিস্থিতিকে কিয়ামের (অভ্যুত্থান) জন্য প্রস্তুতকৃত দেখলে বিদ্রোহ কিয়াম করতেন এবং কিয়ামের প্রস্তাবনার কোন প্রয়োজন ছিল না।

কিয়াম বা অভ্যুত্থান না করার অপর একটি কারণ হচ্ছে সমর্থক ও সাহায্যকারী লোকের অভাব। কিয়াম বা অভ্যুত্থানের ক্ষেত্রে সাধারণ জনগণের সমর্থন থাকতে হয় এবং উপযুক্ত সময় আসতে হয়। ইমাম আলী (আ.) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, আমি লক্ষ্য করেছি এবং দেখেছি যে আমার পরিবার ব্যতীত আমার কোন সাহায্যকারী নেই। তাদের মৃত্যুর বিষয়ে আমি রাজি হই নি।[৫]

গৃহে অবস্থানকালীন সময়ে ইমামত

তিন খলিফার ২৫ বছরের শাসনামলে মুসলিম সমাজের হেদায়েতের জন্য ইমাম নিজেকে সর্বাত্মকভাবে নিয়োজিত করেন। বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ জাফর শাহীদীর ভাষ্য অনুযায়ী যেখানেই মানুষের জন্য ইমামের দিকনির্দেশনার প্রয়োজন দেখা দিত তিনি প্রথপ্রদর্শন করতেন, সমস্যা দেখা দিলে তিনি তার সমাধান করতেন। ভুল হুকুম জারি হলে সঠিকটাকে তিনি তাদেরকে দেখিয়ে দিতেন এবং তাঁর পূর্বে যারা ফিলাফতের মসনদকে নিজেদের জন্য বরাদ্দ করেছিলেন তাদেরকে নির্দেশনা প্রদান করতে কোন রকম কার্পণ্য করতেন না।[৬]

রিসোর্স

  1. সুবহানি, জাফর, আল-মাযহাব আল-ইসলামিয়া, পৃষ্ঠা ১৯৪, মুআসসাসাত ইমাম সাদিক (আ.), জাভা, ১৪২৩ হিজরি।
  2. সিরাত ইবনে হিশাম, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৩১৬, মাকারিম শিরাজি কর্তৃক উদ্ধৃত, পয়গামে ইমাম, জাভা, প্রথম সংস্করণ, ১৩৭৫ হিজরি, প্রকাশক দার আল-কুতুব আল-ইসলামিয়া।
  3. ইকতিবাস থেকে: রে শহরি, মুহাম্মদ, রাহবারি দার ইসলাম, পৃষ্ঠা ২৩৪, দার আল-হাদিস, প্রথম সংস্করণ, ১৩৭৯ হিজরি।
  4. নাহজুল বালাগা, খুতবা ৭৪।
  5. নাহজুল বালাগা, খুতবা ২৬।
  6. শহীদি, জাফর, আলী আজ ভাষায়ে আলী, পৃষ্ঠা ৪২, দফতরে নাশরে ফারহাঙ্গে ইসলামি, ষষ্ঠ সংস্করণ, ১৩৭৬ হিজরি।

টেমপ্লেট:تکمیل مقاله