নামাযে সিজদাগাহ ব্যবহার

প্রশ্ন

শিয়ারা কেন সিজদাগার উপর সিজদা করে?

শিয়াদের মতে সিজদাগার উপর সিজদা করাকে মহানবির (সা.) একটি সুন্নতের উপর আমল করা বলে মনে করে; কেননা তিনি সিজদার সময় মাটির উপর কপাল রাখতেন। এক রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে, মহানবি (স.) কার্পেটের উপর সিজদারত এক ব্যক্তিকে নিষেধ করেন, একইভাবে মসজিদে সঙ্গে করে পাথর এনে সিজদা করা এক ব্যক্তির কাজকে সমর্থন করেছেন। হযরত ফাতিমা (সালামুল্লাহি আলাইহা) মহানবির (সা.) চাচা হযরত হামযা’র কবর থেকে মাটি এনে তা দিয়ে সিজদাগাহ বানাতেন। ইমাম সাজ্জাদও (আলাইহিস সালাম) ইমাম হুসাইনের (আ.) শাহাদাতের পর কারবালার মাটি দিয়ে সিজদাগাহ তৈরি করে তার উপর সিজদা করতেন।

মহানবির (স.) ও তাঁর আসহাব মাটির উপর সিজদা করেছেন

বিশিষ্ট সুন্নি আলেম আব্দুল ওয়াহাব শাফেয়ী বলেন: আমি আহলে সুন্নতের নির্ভরযোগ্য গ্রন্থে দলীল হিসেবে প্রণয়নযোগ্য একটি রেওয়ায়েতও পায়নি যাতে স্পষ্ট ভাষায় কার্পেট ও পোশাকের উপর সিজদার বৈধতা প্রদান করা হয়েছে। বরং এগুলোর উপর সিজদা সঠিক না হওয়া প্রসঙ্গে রেওয়ায়েত পেয়েছি।[ইরফানিয়ান, ইয়াযদি খোরাসানী, গোলাম রেজা, আল-ওয়াদু ওয়াস সুজুদ ফিল কিতাবি ওয়াস সুন্নাহ, হাওযা ইলমিয়া কোম, প্রথম, ১৩৭২ সৌরবর্ষ, পৃ. ৪৬।]

শিয়া ও সুন্নি সূত্রে বহু সংখ্যক রেওয়ায়েত বর্ণিত হয়েছে যে, মহানবি (স.) সিজদার সময় মাটির উপর কপাল রাখতেন।[ইরফানিয়ান, ইয়াযদি খোরাসানী, গোলাম রেজা, আল-ওয়াদু ওয়াস সুজুদ ফিল কিতাবি ওয়াস সুন্নাহ, হাওযা ইলমিয়া কোম, প্রথম, ১৩৭২ সৌরবর্ষ, পৃ. ৫৭।] বিভিন্ন রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে মহানবি (স.) বলতেন, মাটিকে তাঁর জন্য সিজদার স্থান ও পবিত্রতার উৎস হিসেবে প্রদান করা হয়েছে।[আমিনী, রাহ ওয়া রাভিশে মা রাহ ওয়া রাভিশে পায়াম্বার আস্ত, অনুবাদক সাইয়্যেদ বাকের মুসাভি, তেহরান, মাকতাবাতুল ইমাম আমিরিল মু’মিনীন, দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৩৯৪ সৌরবর্ষ, পৃ. ২৩১।] কানযুল উম্মালে বর্ণিত এক রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে কার্পেটের উপর নামায আদায়কারী (সিজদাকারী) এক ব্যক্তিকে মহানবী (স.) এ কাজ করতে নিষেধ করেছেন এবং কার্পেট সরিয়ে দিয়েছেন।[আল-হিন্দী, কানযুল উম্মাল, পৃ. ১২৭।]

দ্বিতীয় খলিফার পুত্র আবদুল্লাহ ইবনে উমর থেকে বর্ণিত, এক বৃষ্টির রাতে তিনি সকালের নামাযের জন্য মসজিদে গিয়ে এক ব্যক্তিকে দেখলেন নামাযের জন্য একটি উপযুক্ত পাথর বাছাই করলো, অতঃপর একটি কাপড় বিছিয়ে তার উপর পাথরটি রেখে নামায আদায় করলো, নবী (সা.) তাকে দেখে তার কাজকে সুন্দর এবং উত্তম বললেন।[আতায়ী ইসফাহানী, পৃ. ৩৮ ও ৩৯।]

এ সংশ্লিষ্ট রেওয়ায়েতগুলোর ভিত্তিতে শিয়া আলেমগণের বিশ্বাস মাটির উপর বা মহানবির (স.) সুন্নত যা কিছুর উপর সিজদার বৈধতা প্রদান করে সেগুলোর উপর সিজদা করা যাবে।

মুসলমানরাও মহানবির (স.) অনুসরণ করে মাটির উপর সিজদা করতেন; কিছু কিছু রেওয়ায়েতে উল্লেখিত হয়েছে যে, প্রথম খলিফা সবসময় মাটির উপর নামায আদায় করতেন, আর যদি তিনি কার্পেটের উপর নামাযের জন্য দাঁড়াতেন তাহলে কপাল মাটির উপর রাখতেন।[আল-হিন্দী, আল্লামা আলাউদ্দীন আল-মুত্তাকী ইবনে হিসামুদ্দীন, কানযুল উম্মাল ফি সুনানিল আকওয়ালি ওয়াল আফআল, বৈরুত মুআসসাসাতুর রিসালাহ, ১৪০৯ হিজরী, খণ্ড ৮, পৃ. ১২৮।] কাপড়ের উপর নামায আদায়কারী এক ব্যক্তিকে তিনি এ কাজ করতে নিষেধ করেছেন।[আতায়ী ইসফাহানী, পৃ. ৫১] দ্বিতীয় খলিফার মতে সিজদা হল কপাল ও মুখমণ্ডলকে মাটির উপর রাখা, আর তিনি মাটির উপর সিজদা করতেন।[আতায়ী ইসফাহানী, পৃ. ৫২] তৃতীয় খলিফাও মাটির উপর সিজদা করতেন।[আতায়ী ইসফাহানী, পৃ. ৫৫।] প্রসিদ্ধ সাহাবি ও ইসলামের প্রথমযুগের বিশিষ্ট মুহাদ্দিস আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ শুধু মাটির উপরই সিজদা করতেন।[ইরফানিয়ান, ইয়াযদি খোরাসানী, গোলাম রেজা, আল-ওয়াদু ওয়াস সুজুদ ফিল কিতাবি ওয়াস সুন্নাহ, হাওযা ইলমিয়া কোম, প্রথম, ১৩৭২ সৌরবর্ষ, পৃ. ৫৭।] মুসলমানদের একটি দল সফরে যাওয়ার সময় মদিনার মাটি দিয়ে নিজেদের জন্য মোহর (সিজদাগাহ) বানিয়ে সাথে নিয়ে যেতেন এবং তাতে নামায আদায় (সিজদা) করতেন।[আতায়ী ইসফাহানী, পৃ. ৬৭-৬৯]

আহলে বাইত (আ.) মোহরের উপর সিজদা করতেন

মহানবির (সা.) চাচা হযরত হামযাহ বিন আব্দুল মুত্তালিবের শাহাদাতের পর হযরত ফাতেমা যাহরা (সা. আ.) হযরত হামযাহ’র কবর থেকে মাটি নিয়ে তা দিয়ে যিকর করার জন্য তসবিহ ও সিজদার জন্য মোহর বানিয়েছেন।[ইরফানিয়ান, ইয়াযদি খোরাসানী, গোলাম রেজা, আল-ওয়াদু ওয়াস সুজুদ ফিল কিতাবি ওয়াস সুন্নাহ, হাওযা ইলমিয়া কোম, প্রথম, ১৩৭২ সৌরবর্ষ, পৃ. ৬৪-৬৭।]

ইমাম হুসাইনের (আ.) শাহাদাতের পর ইমাম সাজ্জাদও (আ.) কারবালার মাটি দিয়ে তসবিহ বানিয়ে তা দিয়ে যিকর পড়তেন এবং মোহর বানিয়ে তার উপর সিজদা করতেন। শিয়ারা নিজেদের ইমামদের অনুসরণ করতঃ কারবালার মাটি দিয়ে মোহর বানিয়ে ব্যবহার করত, পরবর্তীতে শিয়াদের মাঝে বিষয়টির প্রচলন ঘটে।[ইরফানিয়ান, ইয়াযদি খোরাসানী, গোলাম রেজা, আল-ওয়াদু ওয়াস সুজুদ ফিল কিতাবি ওয়াস সুন্নাহ, হাওযা ইলমিয়া কোম, প্রথম, ১৩৭২ সৌরবর্ষ, পৃ. ৪৬-৬৬।]