trustworthy
১৫৯টি
সম্পাদনা
(ابرابزار) |
|||
৭ নং লাইন: | ৭ নং লাইন: | ||
== মহানবী’র (স.) আহলে বাইতের (আ.) সাথে ইবনে তায়মিয়ার শত্রুতা == | == মহানবী’র (স.) আহলে বাইতের (আ.) সাথে ইবনে তায়মিয়ার শত্রুতা == | ||
[[ইবনে তায়মিয়া]] আহলে বাইতের কোনো ফজিলতকেই স্বীকার করেন না; বরং তিনি আহলে বাইতের শ্রেষ্ঠত্বকে আরবের জাহেলিয়াত তথা অজ্ঞতা থেকে উৎসারিত বলে মনে করেন। ইবনে তায়মিয়া বলেন: [[রাসূলুল্লাহ (সা.)]]-এর আহলে বাইতকে অন্যদের চাইতে শ্রেষ্ঠ ও উত্তম বলে বিশ্বাস করা জাহেলি যুগের চিন্তাধারার অংশ, যে যুগে গোত্রের নেতা ও প্রধানদের অন্যদের ওপর প্রাধান্য দেওয়া হতো।" | [[ইবনে তায়মিয়া]] আহলে বাইতের কোনো ফজিলতকেই স্বীকার করেন না; বরং তিনি আহলে বাইতের শ্রেষ্ঠত্বকে আরবের জাহেলিয়াত তথা অজ্ঞতা থেকে উৎসারিত বলে মনে করেন। ইবনে তায়মিয়া বলেন: [[রাসূলুল্লাহ (সা.)]]-এর আহলে বাইতকে অন্যদের চাইতে শ্রেষ্ঠ ও উত্তম বলে বিশ্বাস করা জাহেলি যুগের চিন্তাধারার অংশ, যে যুগে গোত্রের নেতা ও প্রধানদের অন্যদের ওপর প্রাধান্য দেওয়া হতো।"<ref>ইবন তাইমিয়াহ, আহমদ বিন আবদুল হালিম, মিনহাজুস সুন্নাহ, মিসর, মুয়াসসাসাতু কুরতুবা, খ: ৩, পৃ: ২৬৯।</ref> ইবনে তায়মিয়ার এই বক্তব্যসমূহ ইসলাম ধর্মের শিক্ষার পরিপন্থী; কারণ যেরূপভাবে কুরআনে আয়াতে তাতহীরে তেমনিভাবে রাসূলুল্লাহ (স.)-এর বিভিন্ন হাদিসসমূহে বিশেষ করে [[হাদিসে সাকালাইন]] ও[[ হাদিসে সাফিনাহ]]’তে আহলে বাইত (আ.)-এর ফজিলতের ওপর বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। আর কুরআনে আয়াতে কুরবা তথা মাওয়াদ্দাতের আয়াতে আহলে বাইতের প্রতি ভালোবাসা মুসলমানদের উপর ওয়াজীব করা হয়েছে। | ||
ইবনে তায়মিয়া [[ইমাম আলী (আ.)]]-কে রক্তপাত ও ক্ষমতা লোভের ক্ষেত্রে ফেরাউনের সাথে তুলনা করেন। অথচ শিয়া ও সুন্নি উভয় মাযহাবের সূত্রগুলোতে একটি বর্ণিত হয়েছে যে, [[আলী]], [[ফাতিমা]],[[হাসান]] ও হুসাইন (আ.)-কে মহানবী (স.) বলেছেন: অর্থাৎ {{arabic|انا حرب لمن حاربتم و سلم لمن سالمتم|translation=তোমরা যার সাথে যুদ্ধ করবে, আমিও তার সাথে যুদ্ধ করব; আর তোমরা যার সাথে সন্ধি ও আপোষ করবে, আমিও তার সাথে সন্ধি ও আপোষ করবো।}} | ইবনে তায়মিয়া [[ইমাম আলী (আ.)]]-কে রক্তপাত ও ক্ষমতা লোভের ক্ষেত্রে ফেরাউনের সাথে তুলনা করেন। অথচ শিয়া ও সুন্নি উভয় মাযহাবের সূত্রগুলোতে একটি বর্ণিত হয়েছে যে, [[আলী]], [[ফাতিমা]],[[হাসান]] ও হুসাইন (আ.)-কে মহানবী (স.) বলেছেন: অর্থাৎ {{arabic|انا حرب لمن حاربتم و سلم لمن سالمتم|translation=তোমরা যার সাথে যুদ্ধ করবে, আমিও তার সাথে যুদ্ধ করব; আর তোমরা যার সাথে সন্ধি ও আপোষ করবে, আমিও তার সাথে সন্ধি ও আপোষ করবো।}}<ref>হাকিম নিশাপুরী, মোহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ, আল-মুস্তাদরাক আলাস সহিহাইন, বৈরুত, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ, চ: ১, ১৪১১ হি./১৯৯০ ম., গবেষণা: মুস্তাফা আবদুল কাদির আতা, খ: ৩, পৃ: ১৬১; সুনান ইবন মাজাহ, মোহাম্মদ বিন ইয়াজিদ আবু আবদুল্লাহ আল-কুজুইনি, সুনান ইবন মাজাহ, দারুল ফিকর - বৈরুত, গবেষণা: মোহাম্মদ ফুয়াদ আবদুল বাকী, পৃ: ৫২।</ref> জাসসাস এই হাদিসটি উল্লেখ করার পর বলেন, যে ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ লিপ্ত হবে, সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে বলে বিবেচিত হবে, এমনকি সে যদি মুশরিকও না হয়।<ref>জাসস, আহমদ বিন আলী আর-রাজী, আহকামুল কুরআন লিল জাসস, বৈরুত, দার ইহিয়াউত্তুরাস আল-আরাবি, ১৪০৫ হি., গবেষণা: মোহাম্মদ আস-সাদিক কামাহাউই, খ: ৪, পৃ: ৫১।</ref> | ||
এই হাদিস এবং অন্যান্য অগণিত হাদিস ও ঐতিহাসিক প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও ইবনে তায়মিয়া ও ওয়াহাবীদের এরূপ বিশ্বাস ও অবস্থান এটি নিশ্চিত করে যে, ইবনে তায়মিয়া এবং তার অনুসারীদের শত্রুতা কেবল আহলে বাইতের প্রতিই নয়, বরং তা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিদ্বেষ ও শত্রুতা থেকে উদ্ভূত। | এই হাদিস এবং অন্যান্য অগণিত হাদিস ও ঐতিহাসিক প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও ইবনে তায়মিয়া ও ওয়াহাবীদের এরূপ বিশ্বাস ও অবস্থান এটি নিশ্চিত করে যে, ইবনে তায়মিয়া এবং তার অনুসারীদের শত্রুতা কেবল আহলে বাইতের প্রতিই নয়, বরং তা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিদ্বেষ ও শত্রুতা থেকে উদ্ভূত। | ||
আমিরুল মুমিনীন আলী (আ.) এবং তাঁর সঙ্গীদের সম্পর্কে ইবনে তায়মিয়া এমন কিছু কথা বলেছেন যা ইমাম আলী (আ.)-এর প্রতি তাঁর প্রকাশ্য শত্রুতার বিষয়টি প্রমাণ করে। তিনি বলেন: "খারেজি, উমাইয়া এবং মারওয়ানিদের ন্যায় যারা আলীকে গালি দিয়েছে, তাকে লানত করেছে এবং তাকে কাফির ও জালিম বলে ঘোষণা করেছে, তারা সবাই ইসলামের অনুসারী ছিল এবং ইসলামী আচার-আচরণ মেনে চলতো। কিন্তু আলীকে যারা নিষ্পাপ জ্ঞান করেন এবং যারা তাঁর অনুসারী, তারা সকলেই মুরতাদ ও কাফের।" | আমিরুল মুমিনীন আলী (আ.) এবং তাঁর সঙ্গীদের সম্পর্কে ইবনে তায়মিয়া এমন কিছু কথা বলেছেন যা ইমাম আলী (আ.)-এর প্রতি তাঁর প্রকাশ্য শত্রুতার বিষয়টি প্রমাণ করে। তিনি বলেন: | ||
::"খারেজি, উমাইয়া এবং মারওয়ানিদের ন্যায় যারা আলীকে গালি দিয়েছে, তাকে লানত করেছে এবং তাকে কাফির ও জালিম বলে ঘোষণা করেছে, তারা সবাই ইসলামের অনুসারী ছিল এবং ইসলামী আচার-আচরণ মেনে চলতো। কিন্তু আলীকে যারা নিষ্পাপ জ্ঞান করেন এবং যারা তাঁর অনুসারী, তারা সকলেই মুরতাদ ও কাফের।"<ref>ইবন তাইমিয়াহ, মিনহাজুস সুন্নাহ, খ: ৫, পৃ: ৯।</ref> | |||
অথচ ইমাম আলী (আ.) হচ্ছেন পবিত্র আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত। এছাড়াও আহলে সুন্নতের প্রখ্যাত মুফাসসির ফাখরে রাযী বলেন: "যে ব্যক্তি তার ধর্মের ক্ষেত্রে আলী ইবনে আবি তালিবকে অনুসরণ করবে, নিশ্চয় সে হেদায়েতপ্রাপ্ত।" আর এর প্রমাণ হলো মহানবী (স.) এর উক্তি: {{arabic|اللهم ادر الحق مع علی حیث دار|translation|হে আল্লাহ, আলী যেখানেই থাকুক না কেন, সত্যকে তার সাথে রাখো।}} | অথচ ইমাম আলী (আ.) হচ্ছেন পবিত্র আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত। এছাড়াও আহলে সুন্নতের প্রখ্যাত মুফাসসির ফাখরে রাযী বলেন: "যে ব্যক্তি তার ধর্মের ক্ষেত্রে আলী ইবনে আবি তালিবকে অনুসরণ করবে, নিশ্চয় সে হেদায়েতপ্রাপ্ত।" আর এর প্রমাণ হলো মহানবী (স.) এর উক্তি: {{arabic|اللهم ادر الحق مع علی حیث دار|translation|হে আল্লাহ, আলী যেখানেই থাকুক না কেন, সত্যকে তার সাথে রাখো।}}<ref>ফখরুর রাজী, ফখরুদ্দিন মোহাম্মদ বিন ওমর আত-তামীমি আর-রাজী আশ-শাফেয়ি, আত-তাফসিরুল কবির অথবা মাফাতিহুল গাইব, বৈরুত, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ, চ: ১, ১৪২১ হি./২০০০ ম., খ: ১, পৃ: ১৬৮</ref> এছাড়াও আহলে সুন্নতের সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, আলী সত্যের সাথে এবং সত্য আলীর সাথে রয়েছে, যেখানেই হোক না কেন।<ref>হাকিম নিশাপুরী, আল-মুস্তাদরাক আলাস সহিহাইন, খ: ৩, পৃ: ১৩৪; হাইসামি, নূরুদ্দিন আলী বিন আবু বকর, মাজমাউজ জাওয়ায়েদ, কায়রো, দারুর রিয়ান লিত্তুরাস, বৈরুত, দারুল মাকতাব আল-ইলমিয়্যাহ, ১৪০৮ হি., খ: ৭, পৃ: ২৩৫।</ref> | ||
ইবনে তায়মিয়া আহলে বাইতের ফজিলত সম্পর্কে বর্ণিত সকল হাদিসকে হয় সনদগতভাবে বিতর্কিত বলে উল্লেখ করেন অথবা হাদীসগুলোর দলিলকে প্রত্যাখ্যাত হিসেবে গণ্য করেন। উদাহরণস্বরূপ, আহলে সুন্নতের গ্রহণযোগ্য গ্রন্থসমূহে যেমন সহীহ মুসলিমে আয়াতে তাতহীরের শানে নুযুলে উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা’র বর্ণনা এবং অপর একটি বর্ণনায় উম্মে সালমা থেকে উল্লেখিত হয়েছে যে, এই আয়াত (আয়াতে তাতহীর) নাযিল অবতীর্ণ হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ (স.) বলেন: "হে আল্লাহ! এরাই হচ্ছে আমার আহলে বাইত; এদের থেকে সকল প্রকারের অপবিত্রতা দূর করুন এবং এদেরকে পবিত্র করুন।"<ref>আহমদ বিন হাম্বল, মুসনাদ আহমদ, বৈরুত, দারুস সাদির, বি-তা, খ: ১, পৃ: ৩৩১।</ref> ইবনে তায়মিয়া এই হাদিসের সনদে কোনো খুঁত খুঁজে না পেয়েও আহলে বাইত সম্পর্কে অবতীর্ণ হওয়া এই আয়াত সম্পর্কে অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে বলেন, না এই আয়াত আহলে বাইত সম্পর্কে নাযিল হয়েছে, আর না আহলে বাইত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (স.) এর দোয়া আহলে বাইতের কোনো সদস্যের মর্যাদা বা ফজিলত প্রমাণ করে।<ref>ইবন তাইমিয়াহ, মিনহাজুস সুন্নাহ, মাটবাআতুল কুবরা আল-আমিরিয়্যাহ, চ: ১, ১৩২২ হি., খ: ৩, পৃ: ৪।</ref> | |||
ইবনে তায়মিয়ার এই ধরনের বক্তব্য আহলে বাইতের প্রতি বিদ্বেষ ও শত্রুতার প্রমাণ। অথচ আহলে বাইতের মর্যাদা, কুরআন ও হাদিসের মাধ্যমে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত। আহলে বাইতের প্রতি ভালোবাসা ও সম্মান প্রদর্শন ইসলামের মৌলিক শিক্ষার অংশ, যা ইবনে তায়মিয়ার মতো ব্যক্তিদের বক্তব্য দ্বারা উপেক্ষা করা যায় না। | ইবনে তায়মিয়ার এই ধরনের বক্তব্য আহলে বাইতের প্রতি বিদ্বেষ ও শত্রুতার প্রমাণ। অথচ আহলে বাইতের মর্যাদা, কুরআন ও হাদিসের মাধ্যমে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত। আহলে বাইতের প্রতি ভালোবাসা ও সম্মান প্রদর্শন ইসলামের মৌলিক শিক্ষার অংশ, যা ইবনে তায়মিয়ার মতো ব্যক্তিদের বক্তব্য দ্বারা উপেক্ষা করা যায় না। | ||