হযরত ফাতেমা’র মুহাদ্দাসা হওয়া

প্রশ্ন

হযরত ফাতেমা সালামুল্লাহ আলাইহা’কে কেন মুহাদ্দাসা বলা হয়?

মুহাদ্দাসা হচ্ছে হযরত ফাতেমা যাহরা’র (সা.আ.) অন্যতম একটি লকব তথা উপাধি এবং যার অর্থ হচ্ছে এমন ব্যক্তি যার সাথে ফেরেস্তারা কথোপকথন করেন। ফাতেমা (সা.আ.)-কে এই দৃষ্টিকোন থেকে মুহাদ্দাসা অভিহিত করা হয়েছে যে তিনি ফেরেস্তাদের সাথে বাক্য বিনিময় করেছেন।

মুহাদ্দাস ও মুহাদ্দাসা’র পরিভাষা পরিচিতি

মুহাদ্দাস (مُحَدَّث) ও মুহাদ্দাসা (مُحَدَّثَه) (দাল এর উপর তাশদিদ ও যবর সহকারে) এর অর্থ হচ্ছে এমন ব্যক্তি যার সঙ্গে ফেরেস্তারা কথোপকথন করে থাকেন; যার উপর ইলহাম হয়। ইসলামী রেওয়ায়েতে মুহাদ্দাস বলতে ঐ ব্যক্তিকে বুঝানো হয়েছে যিনি ফেরেস্তাদের কথা শুনতে পান এবং যার কানে চিৎকার দেওয়া হয় এবং তার অন্তর তা প্রবেশ করে। অন্যান্য গ্রন্থসমূহে মুহাদ্দাস এর সংজ্ঞায় এমন ব্যক্তিকে নির্দেশ করা হয়েছে, যে ব্যক্তি পয়গম্বর না হওয়া সত্ত্বেও ফেরেস্তারা তাঁর সাথে কথোপকথন করেন।

আইম্মা আতহার তথা মাসূম ইমামগণ (আ.) মুহাদ্দাস ছিলেন এবং হযরত ফাতেমা যাহরাও (সা.আ.) ছিলেন মুহাদ্দাসা। যেমন হযরত মূসা (আ.) এর মাতা নবী ছিলেন না কিন্তু আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাকে ওহী করেছেন। হযরত মরিয়ম (আ.) ও নবী ছিলেন না অথচ ফেরেস্তারা তাঁর সাথে কথা বলেছেন।

হযরত ফাতেমা (সা.আ.) এর সাথে ফেরেস্তাদের কথোপকথন

হযরত ফাতেমা যাহরা’র (সা.আ.) মুহাদ্দাসা হওয়ার বিষয়টি প্রমাণে বিভিন্ন রেওয়ায়েত বিদ্যমান:

• ইমাম জাফর সাদিক (আ.) বলেছেন: «হযরত ফাতেমা’কে (সা.আ.) এই কারণে মুহাদ্দাসা বলা হয়েছে যে ফেলেস্তারা আসমান হতে অবতীর্ণ হয়ে যেমনভাবে হযরত মরিয়মের সাথে কথা বলতেন, হযরত ফাতেমা’র (সা.আ.) সাথেও কথোপকথন করতেন।»
• ইমাম জাফর সাদিক (আ.) বলেন: «আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যখন তার রাসূল (স.) এর রুহ কবজ করেন তখন হযরত ফাতেমা (সা.আ.) এমন দুঃখ দুর্দশায় আক্রান্ত হন যে আল্লাহ ব্যতীত কেউই সে সম্পর্কে অবগত নন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন একজন ফেরেস্তাকে হযরত ফাতেমা’র (সা.আ.) নিকট প্রেরণ করেন যেন তাঁর দুঃখ ও কষ্ট লাঘব করতে তাঁকে সান্ত্বনা প্রদান করেন এবং তাঁর সাথে কথোপকথন করেন।»
• ইমাম জাফর সাদিক (আ.) হতে বর্ণিত হয়েছে: «হযরত ফাতেমা (সা.আ.) মহানবি (স.) এর ইন্তেকালের পর ৭৫ দিনের বেশী জীবিত ছিলেন না। পিতৃ হারানোর বেদনায় তিনি শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়তেন। এই কারণে হযরত জিব্রাইল প্রায়ই তাঁর নিকট উপস্থিত হতেন এবং তাঁকে পিতা হারানোর শোকে সমবেদনা জানাতেন, যা ছিল হযরত যাহরা’র ভারাক্রান্ত হৃদয়ের জন্য সান্ত্বনা। কখনও তাঁর সম্মানিত পিতার মাকাম ও মর্যাদা সম্পর্কে কথা বলতেন এবং কখনও তাঁর ইন্তেকালের পর তার বংশধরদের সাথে ভবিষ্যতে ঘটতে যাওয়া ঘটনাবলী সম্পর্কে খবর দিতেন।»
• হযরত ফাতেমা’র (সা.আ.) যিয়ারতে এরূপ উল্লেখিত হয়েছে: «السَّلَامُ عَلَيْكِ أَيَّتُهَا الْمُحَدَّثَه الْعَلِيمَه؛ আপনার উপর সালাম হোক, আপনি হচ্ছেন সেই ব্যক্তি যিনি ফেরেস্তাদের সাথে কথা বলেছেন এবং অত্যন্ত জ্ঞানী।»

ফাতেমা (সা.আ.) মুসহাফ হচ্ছে তাঁর মুহাদ্দাসা হওয়ার প্রমাণ

See also: মুসহাফে ফাতেমা

মুসহাফে ফাতেমা (সা.আ.) হচ্ছে এমন একটি গ্রন্থ যা জিব্রাইল মহানবি (স.) এর ইন্তেকালের পর হযরত ফাতেমা (সা.আ.) বলেছেন এবং আমিরুল মু’মিনীন আলী ইবনে আবি তালিব (আ.) সেগুলোকে লিপিবদ্ধ করেছেন। রেওয়ায়েতের উপর ভিত্তি করে, এরূপ একটি গ্রন্থের অস্তিত্বের ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। মুসহাফে ফাতেমা (সা.আ.) এর অস্তিত্ব সম্পর্কিত রেওয়ায়েতগুলো শিয়াদের সবচেয়ে পুরাতন সূত্রসমূহে যেমন বাসায়েরুদ দারাজাত এবং আল-কাফি গ্রন্থে উল্লেখিত হয়েছে।

মুসহাফে ফাতেমা’কে (সা.আ.) এই বিষয়ের প্রমাণ হিসেবে মনে করা হয়েছে যে, আল্লাহর ফেরেস্তারা হযরত ফাতেমা যাহরা (সা.আ.) এর সাথে কথোপকথন করেছেন। আর এটিই ঐ মহিয়সী নারীর মুহাদ্দাসা হওয়ার বিষয়টি প্রমাণ করে।