অন্যের জন্য ইস্তিগফার
রাসুল (সাঃ) কি কুরআনে অন্যদের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন?
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সূরা নূরের একটি আয়াতে মহানবি (স.)-কে নির্দেশ দিচ্ছেন অন্যদের জন্য ইস্তেগফার (আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা) করার। অন্য একটি আয়াতেও মহানবি (স.)-কে বলা হয়েছে যে মু’মিন পুরুষ ও নারীদের জন্য এমনকি গুনাহগারদের জন্য ইস্তেগফার করতে। কুরআন মুনাফিকদের ক্ষেত্রে মহানবি (স.)-এর ইস্তেগফার ফায়দাহীন হওয়া প্রসঙ্গেও কথা বলেছে; কিন্তু তারা যদি তওবা করে এবং মহানবি (স.) তাদের জন্য ইস্তিগফার করেন তবে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদেরকে ক্ষমা করবেন।
মুফাস্সিরগণ, অন্য মানুষের জন্য মহানবির (স.) ইস্তিগফারকে তাদের ব্যাপারে মহানবির (স.) দয়াশীলতার পূর্ণতার নিদর্শন হিসেবে জ্ঞান করেন। শেইখ তুসি মানুষের জন্য মহানবি’র ইস্তিগফারকে তাদের প্রতি এক প্রকারের অনুগ্রহ হিসেবে বিবেচনা করেন যার পরিপ্রেক্ষিতেই থাকবে আল্লাহর মাগফিরাত। এই আয়াতটি শাফাআতের বিষয়টিকে প্রত্যয়ন করে।
কুরআনের আয়াতের ভিত্তিতে, অন্য নবীগণ যেমন: ইব্রাহিম (আ.), ইয়াকুব (আ.) এবং মূসা (আ.) ও অন্যদের জন্য যেমন: মু’মিনগণ এবং নিজের পরিবারের কিছু কিছু সদস্যদের জন্য ইস্তিগফার করেছেন। মানব সম্প্রদায়ের জন্য ফেরেস্তাদের ইস্তিগফার এবং মু’মিনদের পরস্পরের জন্য ইস্তিগফার হচ্ছে অন্যতম আরেকটি বিষয় যে সম্পর্কে কুরআনে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
অন্যদের জন্য মহানবি’র (স.) ইস্তিগফার
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআনে হযরত মুহাম্মদ (স.)-কে নির্দেশ দিচ্ছেন অন্যদের জন্য ইস্তিগফার করতে:﴾اسْتَغْفِرْ لَهُمُ اللَّهَ তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো﴿(সূরা নূর:৬২)। এছাড়াও মহানবি (স.)-কে উপদেশ দেওয়া হয়েছে পুরুষ ও নারী মু’মিনগণ[১], গুনাহগার[২] এবং যেসব নারী মু’মিনরা মহানবির (স.) কাছে বাইয়াতের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন[৩], তাদের জন্য ইস্তিগফার করতে। অপর একটি আয়াতে, মুনাফিকদের ক্ষেত্রে মহানবি (স.)-এর ইস্তিগফার ফায়দাহীন হওয়ার ব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছে[৪]; কেননা, তারা ইস্তিগফারের প্রতি বিশ্বাস রাখে না।[৫] কিন্তু তারা যদি তওবা করে এবং মহানবি (স.) তাদের জন্য ইস্তিগফার করেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদেরকে ক্ষমা করে দেন।[৬]
মুফাস্সিরগণ, অন্য মানুষের জন্য মহানবির (স.) ইস্তিগফারকে তাদের ব্যাপারে মহানবির (স.) দয়াশীলতার পূর্ণতার নিদর্শন হিসেবে জ্ঞান করেন।[৭] শেইখ তুসি (৩৮৫-৪৬০ হি.) মানুষের জন্য মহানবি’র ইস্তিগফারকে তাদের প্রতি এক প্রকারের অনুগ্রহ হিসেবে বিবেচনা করেন যার পরিপ্রেক্ষিতেই থাকবে আল্লাহর মাগফিরাত।[৮] এই আয়াতটি শাফাআতের বিষয়টিকে প্রত্যয়ন করে।[৯]
অন্যদের জন্য নবীদের (আ.) ইস্তিগফার
মির্যা জাওয়াদ মালেকি তাবরীযী:
- এক রাতে তাহাজ্জুদের নামাযে অনুভব করলাম অন্য সময়ের চাইতে আমার উপর বেশি বরকত বর্ষিত হচ্ছে। পরের দিন যখন অনুসন্ধানের জন্য তৎপর হলাম তখন বুঝলাম যে একজন ছাত্র মাদ্রাসায় ঐ রাতে নামাযের কুনুতে আমার নাম স্মরণ করেছে এবং আমার জন্য আল্লাহর রহমত কামনা করেছে।[১০]
নবীদের (আ.) পক্ষ থেকে তাঁদের সঙ্গী-সাথী ও অন্যদের জন্য ইস্তিগফারের বিষয়টি কুরআন উল্লেখ করেছে:
- হযরত ইব্রাহিম (আ.): নিজের পিতার (অথবা চাচা) জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।[১১]
- হযরত মূসা (আ.): নিজের ভাইয়ের জন্য ইস্তিগফার[১২] এবং কিছু সংখ্যক বনি ইসরাঈলের জন্য মাগফিরাত কামনা করেছিলেন।[১৩]
- হযরত নূহ (আ.): নিজ সন্তানের জন্য ইস্তিগফার যা আল্লাহর পক্ষ থেকে কবুল করা হয়নি।[১৪] এছাড়াও পিতা, মাতা এবং কিছু কিছু নারী ও পুরুষ মু’মিনের জন্য মাগফিরাত কামনা।[১৫]
- হযরত ইয়াকুব (আঃ) : তিনি তার সন্তানদের জন্য ক্ষমা চেয়েছিলেন।[১৬]
মু’মিগণের জন্য ফেরেস্তাগণের ইস্তিগফার
মু’মিন বান্দাদের জন্য ফেরেস্তগণের ইস্তিগফার কুরআনের দু’টো সূরায় উল্লেখিত হয়েছে:
- ঈমানদারদের জন্য ফেরেস্তাগণের ইস্তিগফার:﴾الَّذِينَ يَحْمِلُونَ الْعَرْشَ وَمَنْ حَوْلَهُ يُسَبِّحُونَ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَيُؤْمِنُونَ بِهِ وَيَسْتَغْفِرُونَ لِلَّذِينَ آمَنُوا رَبَّنَا وَسِعْتَ كُلَّ شَيْءٍ رَّحْمَةً وَعِلْمًا فَاغْفِرْ لِلَّذِينَ تَابُوا وَاتَّبَعُوا سَبِيلَكَ وَقِهِمْ عَذَابَ الْجَحِيمِ যারা আরশ বহন করে এবং যারা তার চারপাশে আছে, তারা তাদের পালনকর্তার সপ্রশংস পবিত্রতা বর্ণনা করে, তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং মুমিনদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করে বলে, হে আমাদের পালনকর্তা, আপনার রহমত ও জ্ঞান সবকিছুতে পরিব্যাপ্ত। অতএব, যারা তওবা করে এবং আপনার পথে চলে, তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন।﴿(সূরা গাফির:৭)
- জমিনের অধিবাসীদের জন্য ফেরেস্তাগণের ইস্তিগফার:﴾تَكَادُ السَّمَاوَاتُ يَتَفَطَّرْنَ مِن فَوْقِهِنَّ ۚ وَالْمَلَائِكَةُ يُسَبِّحُونَ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَيَسْتَغْفِرُونَ لِمَن فِي الْأَرْضِ ۗ أَلَا إِنَّ اللَّهَ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ قریب ہے کہ آسمان اوپر سے پھٹ پڑیں اور فرشتے اپنے پروردگار کی تعریف کے ساتھ اس کی تسبیج کرتے رہتے ہیں اور جو لوگ زمین میں ہیں ان کے لئے معافی مانگتے رہتے ہیں۔ سن رکھو کہ خدا بخشنے والا مہربان ہے﴿(সূরা শুরা:৫)
পরস্পরের জন্য মু’মিনগণের ইস্তিগফার
কোন কোন মুসলমানগণ নিজের জন্য এবং একে অন্যের জন্য দোয়া করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।[১৭] তাফসীরকারকগণ বিশ্বাস করেন, এই আয়াত সার্বিক এবং সমস্ত মুসলমান অনর্ভূক্ত হবেন।[১৮] ইমাম আলী (আ.) অন্যদের জন্য ইস্তিগফার করতেন।[১৯]
তথ্যসূত্র
- ↑ সূরা হামদ, আয়াত ১৯।
- ↑ সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৫৯।
- ↑ সূরা মুমতাহেনা, আয়াত ১২।
- ↑ সূরা তওবা, আয়াত ৮০ ও ১১৩। সূরা মুনাফিকুন, আয়াত ৫ ও ৬।
- ↑ সূরা ফাতহ, আয়াত ১১।
- ↑ সূরা নিসা, আয়াত ৬০।
- ↑ তাবারসি, ফাযল ইবনে হাসান, তাফসীরে জাওয়ামেউল জামেঅ, তরজমা: আহমাদ আমীরী শাদ মেহরী, মাশহাদ, বুনিয়াদে পেঝুহেশহায়ে ইসলামী অস্তানে কুদসে রাযাভি, ১৩৭৫ ফার্সি সন, খণ্ড ১, পৃ. ৫৬০।
- ↑ তুসি, মুহাম্মাদ ইবনে হাসান, আত-তিবইয়ান ফি তাফসীরিল কুরআন, বৈরুত, দারু ইহিয়ায়িত তুরাসিল আরাবি, প্রথম সংস্করণ, খণ্ড ৭, পৃ. ৪৬৬।
- ↑ ফাযল মুওয়াহহেদি লাঙ্কারানি, মুহাম্মাদ, আখলাকে ফাযেল, কোম, মারকাযে ফিকহীয়ে আইম্মা আতহার (আ.), ১৩৮৯ ফার্সি সন, খণ্ড ১, পৃ. ২৫৯।
- ↑ সুরূশ, “শারহে গাযালিয়াতে শামস”, যালাসেয়ে শোনযদাহোম, পৃ. ১-২।
- ↑ সূরা মুমতাহেনা, আয়াত ৪।
- ↑ সূরা আরাফ, আয়াত ১৫১।
- ↑ সূরা আরাফ, আয়াত ১৫৫।
- ↑ সূরা হুদ, আয়াত ৪৫-৪৭।
- ↑ সূরা নূহ, আয়াত ২৮।
- ↑ সূরা ইউসুফ, আয়াত ৯৭-৯৮।
- ↑ সূরা হাশর, আয়াত ১০।
- ↑ মাকারেম শিরাজী, নাসের, তাফসীরে নেমুনেহ, তেহরান, ইন্তেশারাত, দারুল কুতুব আল-ইসলামীয়্যাহ, ১৩৭৪ ফার্সি সন, খণ্ড ২৩, পৃ. ৫২২।
- ↑ নাহজুল বালাগাহ, খুতবা ১৯৭।