আল্লাহকে জানার প্রয়োজনীয়তা

WikiPasokh থেকে
প্রশ্ন

প্রশ্ন: আল্লাহকে জানার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব কি? আল্লাহ পরিচির প্রতি মনোনিবেশ না করলে পরিণতি কি হতে পারে?


আল্লাহকে জানার প্রয়োজনীয়তা প্রসঙ্গে কালাম শাস্ত্রবিদগণ দু’টি কারণ উল্লেখ করেছেন;

  • নবিগণ সত্যবাদী হলে পরকালীন শাস্তির সম্ভাবনা (সম্ভাব্য ক্ষতি রোধ করা)।
  • মানবজাতিকে যে সকল নিয়ামত মহান আল্লাহ দান করেছেন তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশের বাধ্যবাধকতা; আর এ বিষয়টি শুধুমাত্র নিয়ামতদাতা সম্পর্কে পরিচিত থাকার শর্তে সম্ভব (নিয়ামত দানকারীর প্রতি কৃতজ্ঞতা)। এছাড়া সমগ্র মানবেতিহাসে মহান আল্লাহর প্রতি মানুষের মনোযোগ এবং অস্তিত্বের উৎপত্তি সম্পর্কে জানার আগ্রহ, আল্লাহ সম্পর্কে জানার বিষয়টির গুরুত্ব বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে।

আল্লাহ পরিচিতির গুরুত্ব

অস্তিত্বের উৎপত্তি সম্পর্কে জানার আগ্রহ মানুষের কাছে বরাবরই গুরুত্ব পেয়েছে। এছাড়া, ধর্মীয় শিক্ষার একটি বড় অংশ জুড়ে প্রতিপালকের বৈশিষ্ট্য এবং তাঁর সাথে মানুষ ও বিশ্বের সম্পর্কের বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে।

আল্লাহকে চেনার গুরুত্ব, মানুষের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে আল্লাহ্ সম্পর্কে পরিচিতির প্রভাবের দিকটি বিবেচনা পূর্বক উত্থাপন করা যেতে পারে। নিঃসন্দেহে যে আল্লাহকে চেনে তার জীবনের সাথে আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাসী নয় এমন ব্যক্তির জীবনের মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। একইভাবে আল্লাহতে বিশ্বাসী দু’জন লোকের জীবন -যাদের প্রত্যেকে মনে আল্লাহ সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন চিত্র রয়েছে- পরস্পরের সাথে তুলনা করলে মৌলিক পার্থক্য স্পষ্ট হয়। এ সবের কারণ হলো মহান আল্লাহর প্রতি মানুষের বিশ্বাস, জীবনের বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে তাঁর গুণাবলী সম্পর্কে মানুষের উপলব্ধি মানুষের উদ্দেশ্য, আগ্রহ, বিচার-বিবেচনা ও আচার-আচরণকে পূর্ণরূপে প্রভাবিত করে। এক কথায় তার জীবনকে অর্থবহ করে তোলে এবং তার জন্য বিশেষ ব্যক্তিত্ব ও স্বকীয়তা এনে দেয়।

আল্লাহকে জানার প্রয়োজনীয়তা

ফিতরাতগতভাবে আল্লাহ পরিচিতি একটা স্তর পর্যন্ত মানুষের মাঝে বিদ্যমান। সহজাত এই পরিচিতি শুধু মানুষের মাঝে আল্লাহ পরিচিতি বৃদ্ধি পাওয়ার ক্ষেত্র তৈরি করে দেয়। আল্লাহ্ পরিচিতির পথে পদচারণা ও চিন্তার প্রয়োজনীয়তার গুরুত্ব তুলে ধরতে মুসলিম কালাম শাস্ত্রবিদগণ আল্লাহকে চেনার প্রয়োজনীয়তা প্রসঙ্গে বিভিন্ন যুক্ত প্রণয়ন করেছেন।[কালাম শাস্ত্রের কিছু কিছু গ্রন্থে ‘উজুবুন নাযার’ শিরোনামে এ সংশ্লিষ্ট আলোচনা উত্থাপিত হয়েছে। ইমামিয়া ও মু’তাযেলি কালাম শাস্ত্রবিদদের মতে, এই উজুব ও আবশ্যকতা বুদ্ধবৃত্তিভিত্তিক, আর আশআরিগণের দৃষ্টিতে শরিয়তগত উজুব। অধিক অবগতির জন্য দেখুন আল্লামা হিল্লি, কাশফুল মুরাদ, পৃ. ২৬০ ও ২৬১; আস-সুয়ূরী, জামালুদ্দীন মেকদাদ ইবনে আব্দুল্লাহ (ফাযেল মেকদাদ), ইরশাদুত তালেবীন ইলা নাহজুল মুস্তারশিদীন, পৃ. ১১-১১৩।]

সম্ভাব্য ক্ষতি রোধ করা

যে ব্যক্তিই আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত নবির আবির্ভাব এবং আল্লাহকে উপাসনার প্রতি তাদের আমন্ত্রণ সম্পর্কে অবগত থাকে তার মনে এ সম্ভাবনা সৃষ্টি হয় যে, নবিগণের দাওয়াত সত্য হলে, নবিগণ যে কর্তব্য তার জন্য এনেছেন সেগুলোর উপর আমল না করার কারণে সে আজাব ও শাস্তির মুখোমুখি হবে; ফলে সে বড় ক্ষতি ও লোকসানের মুখে পড়বে। অপরদিকে মানুষের বুদ্ধিবৃত্তি ও জ্ঞানের দাবী হল, যতদূর সম্ভব ক্ষতি এবং শাস্তির মুখোমুখি হওয়া থেকে নিজেকে দূরে রাখা, তাই সে বিষয়ে যদি নিশ্চয়তা নয় শুধু সম্ভাবনাও থাকে।

অতএব, প্রত্যেক মানুষের জন্য এ সম্ভাবনা রয়েছে যে, ধর্মের অনুসরণ না করার কারণে তাকে শাস্তি পেতে হবে। আর যেহেতু বুদ্ধিবৃত্তি শাস্তির মাধ্যমে যে ক্ষতির মুখোমুখি আমরা হতে পারি তা রোধ করার বিষয়টিকে আবশ্যক জ্ঞান করে, তাই তা মানুষকে এ নির্দেশনা দেয়, যেন মানুষ সৃষ্টিকর্তার সত্ত্বা ও তাঁর গুণাবলি সম্পর্কে গবেষণা ও চিন্তা করে; যাতে বাস্তবিক অর্থে যদি কোন স্রষ্টা থেকে থাকে এবং নবিগণের আমন্ত্রণ সত্য হয়ে থাকে, তবে তাদের অনুসরণের মাধ্যমে নিজেকে আল্লাহর আযাব থেকে সুরক্ষিত রাখতে পারে।

নিয়ামত দানকারীর প্রতি কৃতজ্ঞতা

নিঃসন্দেহে মানুষ তার জীবনে রংবেরঙের বিভিন্ন নিয়ামতের মাঝে ডুবে আছে। অপরদিকে মুনঈম (নিয়ামতদাতা)-এর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনকে বুদ্ধিবৃত্তি তথা মানুষের আকল জরুরি বলে জ্ঞান করে; অতএব, মানুষের জন্য আবশ্যক হলো, নিয়ামত প্রদানকারীর কৃতজ্ঞতা জানানো। আর যেহেতু কৃতজ্ঞতা স্বীকার, যাকে কৃতজ্ঞতা জানানো হবে তাকে চেনার উপর নির্ভরশীল, তাই মানুষের বুদ্ধিবৃত্তি নির্দেশ করে যেন প্রকৃত নিয়ামত দাতাকে (মহান স্রষ্টা) চেনার পথে আমরা পা বাড়াই।