ঋণ প্রদানের আঠারো গুণ সাওয়াব

WikiPasokh থেকে
প্রশ্ন

ঋণ প্রদানের আঠারো গুণ সাওয়াব সংক্রান্ত হাদীসটি কি সহীহ?

ঋণ প্রদানের আঠারো গুণ সাওয়াব


ঋণ প্রদানের আঠারো গুণ সাওয়াব সংক্রান্ত হাদীসটি আল-কাফিতাহযীবুল আহকাম এর ন্যায় গ্রন্থসমূহে উল্লেখিত হয়েছে। এ সংক্রান্ত রেওয়ায়েতসমূহের একটি ইমাম জাফর সাদিক (আ.) হতে বর্ণিত হয়েছে যা সনদের দিক থেকে গ্রহণযোগ্য। উক্ত রেওয়ায়েত অনুসারে, সাদকা’র সাওয়াব দশ গুণ এবং ঋণ প্রদানের সাওয়াব আঠারো গুণ।

প্রথম হাদীস

«عَنْ أَبِي عَبْدِ اللَّهِ(ع): مَكْتُوبٌ عَلى بَابِ الْجَنَّةِ: الصَّدَقَةُ بِعَشَرَةٍ، وَ الْقَرْضُ بِثَمَانِيَةَ عَشَرَ؛ বেহেশতে লেখা হয়েছে: সাদকা’র পুরস্কার দশ গুণ এবং ঋণ বা ধার দেওয়ার সাওয়াব হচ্ছে আঠারো গুণ।»[১]

সনদ পর্যালোচনা

এই রেওয়ায়েতটিকে শেইখ কুলাইনি তার আল-কাফি গ্রন্থে, ইমাম জাফর সাদিক (আ.) হতে বর্ণনা করেছেন।[১] উক্ত হাদীসটির রাবীগণ হচ্ছেন আলী ইবনে ইব্রাহিম, তাঁর পিতা, ইবনে আবি উমাইর, মানসুর ইবনে ইউনুস এবং ইসহাক ইবনে আম্মার।[১]

আল্লামা মাজলিসী তার মিরআতুল উকুল গ্রন্থে হাদীসটিকে সনদগত দিক থেকে হাসান বা মুওয়াস্সাক হিসেবে বিবেচনা করেছেন।[২] শিয়া রিজালশাস্ত্রবিদ শেইখ তুসী’র অভিমত হচ্ছে উক্ত হাদীসের অন্যতম রাবী মানসুর ইবনে ইউনুস মাযহাবগত দিক থেকে ওয়াকেফী মাযহাবের[৩], কিন্তু সিকাহ (বিশ্বস্ত) এবং গ্রহণযোগ্য হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।[৪] সুতরাং উক্ত রেওয়ায়েতটি মুওয়াস্সাক ও গ্রহণযোগ্য।

এই রেওয়ায়েতটিকে শেইখ সাদুকও তার মান লা ইয়াহদুরুহুল ফাকীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন।[৫]

দ্বিতীয় হাদীস

«عَنْ أَبِي عَبْدِ اللَّهِ(ع)، قَالَ: «قَالَ رَسُولُ اللَّهِ(ص): الصَّدَقَةُ بِعَشَرَةٍ، وَ الْقَرْضُ بِثَمَانِيَةَ عَشَر…؛ মহানবি (স.) এর উদ্ধৃতি দিয়ে ইমাম জাফর সাদিক (আ.) বর্ণনা করেছেন: সাদকা’র সাওয়াব দশ গুণ এবং ঋণ বা ধার দেওয়ার সাওয়াব আঠারো গুণ ।».[৬]

সনদগত পর্যালোচনা

এই রেওয়ায়েতটিকে আল-কাফি গ্রন্থে শেইখ কুলাইনি হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.) এবং তিনি মহানবি হযরত মুহাম্মাদ (স.) হতে বর্ণনা করেছেন।[৬]

নাওফেলি, যিনি এই হাদীসটির একজন রাবী, পূর্ববর্তী রিজালশাস্ত্রগুলোতে সিকাহ (বিশ্বস্ত) বা যয়ীফ (দুর্বল) হিসেবে বিবেচিত হননি।[৭] হিজরী চতুদর্শ শতাব্দীর রিজালশাস্ত্রবিদ আব্দুল্লাহ মামাকানী’র ভাষ্য মতে, কেউ কেউ তাকে যয়ীফ অভিহিত করেছেন, তবে তিনি তাকে হাসান বলে বিবেচনা করেছেন।[৮]

আল্লাম হিল্লি’র ভাষ্য মতে, এই হাদীসের অন্য আরেকজন রাবী সাকুনি হচ্ছেন সুন্নি মাযহাবের[৯] কেউ কেউ সাকুনি’কে সিকাহ তথা নির্ভরযোগ্য জ্ঞান করেছেন এবং তার রেওয়ায়েতের প্রতি আমল করেছেন।[১০] সুতরাং উক্ত রেওয়ায়েতের সনদ নির্ভরযোগ্য হওয়া বা না হওয়ার বিষয়টি রিজালগত বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত।

আল্লামা মাজলিসী তার মিরআতুল উকুল গ্রন্থে[১১] এবং মালাযুল আখবার[১২] গ্রন্থে এই হাদীসটিকে সনদের দিক থেকে যয়ীফ বলে মনে করেছেন। শেইখ তুসীও উক্ত রেওয়ায়েতটিকে তার তাহযীবুল আহকাম গ্রন্থে অনুরূপ সিলসিলা সনদ (সনদ পরম্পরা) সহকারে শেইখ কুলাইনি হতে বর্ণনা করেছেন।[১৩]

তথ্যসূত্র

  1. ঝাঁপ দিন: ১.০ ১.১ ১.২ কুলাইনি, মুহাম্মদ, আল-কাফি, তেহরান, দারুল কুতুব আল-ইসলামিয়া, চতুর্থ সংস্করণ, ১৪০৭ হিজরি, খণ্ড ৪, বাবুল কারজ, পৃষ্ঠা ৩৩।
  2. মাজলিসি, মুহাম্মদ বাকির, মিরআতুল উকুল ফি শারহি আখবার আল রাসুল, তেহরান, দারুল কুতুব আল-ইসলামিয়া, দ্বিতীয় সংস্করণ, খণ্ড ১৬, পৃষ্ঠা ১৬২।
  3. তুসি, রিজালুত তুসি, তাহকিক জাওয়াদ কাইয়ুমি ইসফাহানি, কুম, জামাআতুল মুদাররিসিন, ১৩৭৩ হিজরি শামসি, পৃষ্ঠা ৩৪৩।
  4. নাজ্জাশি, রিজালুন নাজ্জাশি, তাহকিক মুসা শুবাইরি জানজানি, কুম, জামাআতুল মুদাররিসিন, ১৩৬৫ হিজরি শামসি, পৃষ্ঠা ৪১২।
  5. ইবনে বাবুইয়াহ, মুহাম্মদ, মান লা ইয়াহদুরহুল ফকিহ, কুম, জামাআতুল মুদাররিসিন, দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৪১৩ হিজরি, খণ্ড ২, বাবু সাওয়াবিল কারজ, পৃষ্ঠা ৫৮, হাদিস ১৬৯৭ এবং খণ্ড ২, বাবু ফাদলিস সাদাকা, পৃষ্ঠা ৬৭, হাদিস ১৭৩৮।
  6. ঝাঁপ দিন: ৬.০ ৬.১ কুলাইনি, মুহাম্মদ, আল-কাফি, তেহরান, দারুল কুতুব আল-ইসলামিয়া, চতুর্থ সংস্করণ, ১৪০৭ হিজরি, খণ্ড ৪, বাবুস সাদাকা আলাল কুরবা, পৃষ্ঠা ১০।
  7. নাজ্জাশি, রিজালুন নাজ্জাশি, তাহকিক মুসা শুবাইরি জানজানি, কুম, জামাআতুল মুদাররিসিন, ১৩৬৫ হিজরি শামসি, পৃষ্ঠা ৩৮; তুসি, মুহাম্মদ ইবনে হাসান, রিজালুত তুসি, তাহকিক জাওয়াদ কাইয়ুমি ইসফাহানি, কুম, জামাআতুল মুদাররিসিন, ১৩৭৩ হিজরি শামসি, পৃষ্ঠা ৪৯০।
  8. মামাকানি, আবদুল্লাহ, তানকিহুল মাকাল ফি ইলমির রিজাল, তাহকিক মুহিউদ্দিন মামাকানি ও মুহাম্মদ রেজা মামাকানি, কুম, মুআসসাসাতু আলিল বাইত (আ.) লি-ইহইয়াইত তুরাস, ১৪৩১ হিজরি, পৃষ্ঠা ১৫৫।
  9. আল্লামা হিলি, হাসান ইবনে ইউসুফ, রিজালুল আল্লামা আল-হিলি, তাহকিক মুহাম্মদ সাদিক বাহরুল উলুম, কুম, আশ-শরিফ আর-রিদা, ১৪০২ হিজরি, পৃষ্ঠা ১৯৯।
  10. আস্তারাবাদি, মুহাম্মদ ইবনে আলী, মিনহাজুল মাকাল ফি তাহকিকি আহওয়ালির রিজাল, কুম, মুআসসাসাতু আলিল বাইত (আ.) লি-ইহইয়াইত তুরাস, ১৪২২ হিজরি, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৩০৭।
  11. মাজলিসি, মুহাম্মদ বাকির, মিরআতুল উকুল ফি শারহি আখবার আল রাসুল, তেহরান, দারুল কুতুব আল-ইসলামিয়া, দ্বিতীয় সংস্করণ, খণ্ড ১৬, পৃষ্ঠা ১৩৫।
  12. মাজলিসি, মুহাম্মদ বাকির, মালাজুল আখিয়ার ফি ফাহমি তাহজিবিল আখবার, কুম, কিতাবখানায়ে মারআশি নাজাফি, প্রথম সংস্করণ, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ২৭৮।
  13. তুসি, মুহাম্মদ, তাহজিবুল আহকাম, তেহরান, দারুল কুতুব আল-ইসলামিয়া, চতুর্থ সংস্করণ, ১৪০৭ হিজরি, খণ্ড ৪, বাব ২৯ বাবুজ জিয়াদাত ফিজ জাকাত, পৃষ্ঠা ১০৬, হাদিস ৩৬।

টেমপ্লেট:تکمیل مقاله