মহানবী (সা.)-এর মহান চরিত্র

প্রশ্ন

কলম সূরার ৪ নম্বর আয়াতে নবী (সাঃ)-এর "উচ্চ চরিত্র" বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

আল্লাহ তাআলা মহানবীকে (সা.) পরিপূর্ণ মানবিক চরিত্রের অধিকারী হওয়ার কারণে "খুলুকে আযীম; মহান চরিত্রের অধিকারী" বলে আখ্যায়িত করেছেন। আল্লামা তাবাতাবাঈ ‘খুলুকে আযীম’কে চারিত্রিক গুণাবলি হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন, আর কেউ কেউ এটিকে সুন্দর চরিত্র, সদাচরণ এবং আচরণে কোমলতা হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। খুলুকে আযীমের অন্যান্য অর্থও বর্ণিত হয়েছে, যেমন দ্বীনের ধারক বা এমন জাতির প্রতি সহনশীলতা যা অন্যরা সহ্য করতে পারে না।

মহানবী (সা.)-কে ধৈর্য, ক্ষমা, মার্জনা, সত্যের উপর অটলতা এবং বুদ্ধিবৃত্তির নির্দেশনা অনুযায়ী বিভিন্ন বিষয়াদি পরিচালনার মতো নৈতিক গুণাবলির অধিকারী হিসেবে পরিচয় করানো হয়েছে। মহানবী (সা.) অসৎ চরিত্র থেকেও দূরে ছিলেন। কিছু গবেষক মহানবী (সা.)-এর এই নৈতিক গুণাবলির প্রকাশকেই "খুলুকে আযীম"-এর দৃষ্টান্ত হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন।


আয়াত

﴾وَإِنَّکَ لَعَلَیٰ خُلُقٍ عَظِیمٍ؛ আর নিশ্চয়ই তুমি মহান চরিত্রের অধিকারী।﴿

মহানবী (সা.)-এর নৈতিক গুণাবলি

খুলুকে আযীমের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাখ্যা হল নৈতিক গুণাবলি, যার মধ্যে রয়েছে সত্যের উপর অটলতা, বদান্যতার ব্যাপ্তি, বিভিন্ন বিষয়াদি পরিচালনা, সহনশীলতা, বিপদাপদে ধৈর্যধারণ, বিনয় এবং ক্ষমা[১]

মহানবী (সা.) এজন্য খুলুকে আযীম যে তাঁর মধ্যে সকল উত্তম নৈতিক গুণাবলি একত্রিত হয়েছে। তাফসীরকারগণ "খুলুকে আযীম"-কে সত্যের উপর ধৈর্য, বিশাল দানশীলতা, বুদ্ধিবৃত্তির নির্দেশনা অনুযায়ী বিভিন্ন বিষয়াদি পরিচালনা, মুমিনদের সাহায্যে প্রচেষ্টা এবং হিংসা ও লোভ পরিত্যাগ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। [২] কেউ কেউ খুলুকে আযীমকে দ্বীন হিসেবে পরিচয় করিয়েছেন।[৩]

আল্লামা তাবাতাবাঈ খুলুকে আযীমকে নৈতিক গুণাবলি হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন।[৪] খুলুকে আযীমের একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে এমন জাতির প্রতি সহনশীলতাকে উল্লেখ করা হয়েছে যাদেরকে অন্যরা সহ্য করতে পারে না।[৫] কেউ কেউ খুলুকে আযীমকে সুন্দর চরিত্র, সদাচরণ এবং আচরণে কোমলতা হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন।[৬] রিসালা কুশাইরিয়াতে খুলুকে আযীমের অর্থে বলা হয়েছে যে সত্যকে জানার পর সৃষ্টির নির্যাতন তাঁকে প্রভাবিত করতে পারে না।[৭]

মহানবী (সা.)-এর সামাজিক চরিত্র

শহীদ মুতাহহারী মনে করেন মহানবী (সা.)-এর খুলুকে আযীমের অধিকারী হওয়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাঁর সামাজিক চরিত্রের দিকে ইঙ্গিত করে। তিনি মনে করতেন, আত্মার মহত্ত্ব থেকে উদ্ভূত চরিত্রকে খুলুকে আযীম (মহান চরিত্র) বলা হয়। আল্লাহ কাফের ও মুশরিকদের প্রতি মহানবীর (সা.) প্রতিক্রিয়ার কারণে তাকে খুলুকে আযীমের অধিকারী বলে উল্লেখ করেছেন। [৮]

পবিত্র কুরআনের স্পষ্ট বর্ণনা অনুযায়ী, মহানবী (সা.) নমনীয়তা ও সহনশীলতার ক্ষেত্রে, যেখানে ত্যাগ ও নমনীয়তা প্রদর্শন করা প্রয়োজন, সেখানে এই নৈতিকতার সর্বোচ্চ পর্যায়ে ছিলেন। আল্লাহর ওহী (কুরআন), স্নেহ ও দয়াকে মহানবীর (সা.) সফলতার অন্যতম একটি কারণ হিসেবে গণ্য করে [৯]: আল্লাহর দয়ার কারণেই তুমি তাদের প্রতি কোমল-হৃদয় হয়েছিলে। যদি তুমি রূঢ় ও কঠোর-হৃদয় হতে, তবে তারা তোমার আশপাশ থেকে সরে পড়ত।﴿(আলে ইমরান:১৫৯).

তথ্যসূত্র

  1. কুরায়শী, আলী আকবর, আহসান আল-হাদিস, কুম, দফতারে নাশরে নবীদে ইসলাম, ১৩৯১, খণ্ড ১১, পৃষ্ঠা ২৭৯।
  2. তাবরসি, ফাজল ইবনে হাসান, তরজুমায়ে মাজমা আল-বায়ান ফি তাফসির আল-কুরআন, তরজুমান: মোহাম্মদ বিস্তুনি, বি-জা, ইনতেশারাতে আসতানে কুদসে রেযাভি, বি-তা, খণ্ড ২৫, পৃষ্ঠা ২১২।
  3. মোহাম্মাদি রেই শাহরি, মোহাম্মাদ, মিজান আল-হিকমা, কুম, দার আল-হাদিস, ১৩৭৫, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৪৭৭; কাশানি, মোল্লা ফতহুল্লাহ, মনহাজ আল-সাদেকিন ফি ইলজাম আল-মুখালেফিন, তেহরান, কেতাবফোরুশি মোহাম্মাদ হাসান এলমি, ১৩৩৬, খণ্ড ৯, পৃষ্ঠা ৩৬৯।
  4. তাবাতাবাই, মোহাম্মাদ হোসেইন, তরজুমায়ে তাফসির আল-মিজান, তরজুমান: মুসাভি হামাদানি, সৈয়দ মোহাম্মাদ বাকের, কুম, জামেআয়ে মুদাররিসিনে হাউযা ইলমিয়া কুম, দফতারে ইনতেশারাতে ইসলামী, ১৩৮৭, খণ্ড ১৯, পৃষ্ঠা ৬১৯।
  5. ফাইয কাশানি, মোহসেন, তাফসির আল-সাফি, কুম, মোয়াসসাসা আল-হাদি, ১৪১৬ হিজরি, খণ্ড ৭, পৃষ্ঠা ২৫৯।
  6. মনতাজেরি, হোসেইন আলি, ইসলাম দীন ফিতরাত, তেহরান, নাশরে সায়েহ, ১৩৮৫, পৃষ্ঠা ৩৬৬।
  7. তরজুমায়ে রেসালে কুশাইরিয়া, কুশাইরি, আব্দুলকারিম ইবনে হাওয়াজান, তরজুমান: ওসমানি, হাসান ইবনে আহমাদ, তাসহিহ: ফারোজানফর, বাদিয়ুজ্জামান, তেহরান, এলমি ফারহাঙ্গি, ১৩৭৪, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৯০।

টেমপ্লেট:تکمیل مقاله