trustworthy
১৫৯টি
সম্পাদনা
২৬ নং লাইন: | ২৬ নং লাইন: | ||
== উসুলে দ্বীনের উদাহরণ == | == উসুলে দ্বীনের উদাহরণ == | ||
=== তাওহীদ (একত্ববাদ) === | === তাওহীদ (একত্ববাদ) === | ||
[[তাওহীদ]] হল ইসলাম ধর্মে আকীদা-বিশ্বাসের সবচেয়ে মৌলিক শিক্ষা, যার তাত্ত্বিক এবং কার্যকরী বিভিন্ন দিক রয়েছে। তাওহীদের অর্থ অনুসারে, আল্লাহ একক ও অ-দ্বিতীয় সত্ত্বা, সমস্ত গুণাবলী পূর্ণাঙ্গ রূপে তার মধ্যে বিদ্যমান, তার সমতুল্য ও সমকক্ষ কেউ নেই, পরিবর্তনহীন, সমস্ত জগতের একমাত্র স্রষ্টা এবং তার কোন শরীক নেই। মহাবিশ্বের পরিচালনা তাঁর ইরাদা বা ইচ্ছার মাধ্যমে সংঘটিত হয়, এবং তাঁর জ্ঞান এবং ক্ষমতা সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে রেখেছে। সমস্ত সৃষ্টির অবশ্যকরণীয় হচেছ তাঁকে উপাসনা করা, যে উপাসনা কোনো মধ্যস্থতার মুপাপেক্ষীতা ছাড়াই। কুরআন অনুযায়ী, আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস মানুষের ফিতরাত ও স্বভাব-প্রকৃতিতে নিহিত। আর একত্ববাদ ব্যতীত যেকোন বহুত্ববাদের আকীদা ও বিশ্বাস হচ্ছে বিচ্যুত চিন্তাধারা, আর এই বিচ্যুত চিন্তাধারা মানসিক, পরিবেশগত, ভৌগোলিক বা ঐতিহাসিক কারণ থেকে উৎসারিত হয়। সমস্ত [[নবীগণ (আ.)]] ছিলেন তাওহীদের দিকে আহ্বানকারী এবং তাদের বেশীরভাগই শিরক, বহু ইশ্বরবাদী ধর্ম এবং মূর্তিপূজা বিলুপ্ত করায় সচেষ্ট ছিলেন। | [[তাওহীদ]] হল ইসলাম ধর্মে আকীদা-বিশ্বাসের সবচেয়ে মৌলিক শিক্ষা, যার তাত্ত্বিক এবং কার্যকরী বিভিন্ন দিক রয়েছে। তাওহীদের অর্থ অনুসারে, আল্লাহ একক ও অ-দ্বিতীয় সত্ত্বা, সমস্ত গুণাবলী পূর্ণাঙ্গ রূপে তার মধ্যে বিদ্যমান, তার সমতুল্য ও সমকক্ষ কেউ নেই, পরিবর্তনহীন, সমস্ত জগতের একমাত্র স্রষ্টা এবং তার কোন শরীক নেই। মহাবিশ্বের পরিচালনা তাঁর ইরাদা বা ইচ্ছার মাধ্যমে সংঘটিত হয়, এবং তাঁর জ্ঞান এবং ক্ষমতা সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে রেখেছে। সমস্ত সৃষ্টির অবশ্যকরণীয় হচেছ তাঁকে উপাসনা করা, যে উপাসনা কোনো মধ্যস্থতার মুপাপেক্ষীতা ছাড়াই। কুরআন অনুযায়ী, আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস মানুষের ফিতরাত ও স্বভাব-প্রকৃতিতে নিহিত। আর একত্ববাদ ব্যতীত যেকোন বহুত্ববাদের আকীদা ও বিশ্বাস হচ্ছে বিচ্যুত চিন্তাধারা, আর এই বিচ্যুত চিন্তাধারা মানসিক, পরিবেশগত, ভৌগোলিক বা ঐতিহাসিক কারণ থেকে উৎসারিত হয়। সমস্ত [[নবীগণ (আ.)]] ছিলেন তাওহীদের দিকে আহ্বানকারী এবং তাদের বেশীরভাগই শিরক, বহু ইশ্বরবাদী ধর্ম এবং মূর্তিপূজা বিলুপ্ত করায় সচেষ্ট ছিলেন।<ref> তারেমি রাদ, হাসান, ও দিগেরান, "তাওহীদ", দানেশনামায়ে জাহানে ইসলাম, বুনিয়াদে দায়েরাতুল মাআরিফে ইসলামী, ১৩৯৩ শামসি, খ:৮, জিল মাদখাল।</ref> | ||
=== নবুওয়াত === | === নবুওয়াত === | ||
[[নবুওয়াতে]]র প্রতি বিশ্বাস অর্থ হল যে, মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হলেন আল্লাহর রাসূল এবং তাঁর প্রেরিত প্রতিনিধি। তাঁকে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নবী প্রেরণের ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হিসেবে প্রেরণ করেছেন। কুরআন হল আল্লাহর বানী যা তাঁর উপর ওহী করা হয়েছে। | [[নবুওয়াতে]]র প্রতি বিশ্বাস অর্থ হল যে, মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হলেন আল্লাহর রাসূল এবং তাঁর প্রেরিত প্রতিনিধি। তাঁকে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নবী প্রেরণের ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হিসেবে প্রেরণ করেছেন। কুরআন হল আল্লাহর বানী যা তাঁর উপর ওহী করা হয়েছে।<ref>জামি'য়ে আয নেভেসান্দেগান, "ইসলাম", দায়েরাতুল মাআরিফে বোজুরগে ইসলামী, তেহরান, মারকায দায়েরাতুল মাআরিফে বোজুরগে ইসলামী, খ:৮, জিল মাদখাল।</ref> | ||
=== মাআদ === | === মাআদ === | ||
[[মআদ]] শব্দটির অর্থ ফিরে আসা। কালামশাস্ত্রবিদ এবং দার্শনিকদের মতানুসারে, মাআদ বলতে মৃত্যু পরবর্তী জীবনকে বুঝায় অর্থাৎ মানুষকে যখন পুনরায় জীবিত করা হবে। মআদ সেই দিনকে বলা হয়, যেদিন মানুষের কাজগুলির মূল্যায়ন করা হবে, সৎ ব্যক্তিরা তাদের ভাল কাজের জন্য পুরস্কৃত হবেন এবং পাপী ব্যক্তিরা তাদের খারাপ কাজের জন্য শাস্তি পাবেন। ধর্ম, কালামশাস্ত্রবিদদের ও দর্শনে যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির প্রতি দেরীতে লক্ষ্য করা হয়েছে সেটি হচেছ মৃত্যু পরবর্তী জীবনের বিষয় এবং মাআদ। ধর্মবিশ্বাসীরা মৃত্যুর পরের জীবনের প্রতি বিশ্বাসী ছিলেন এবং তারা পরকালকে তাদের বিশ্বাসের মৌলিক একটি ভিত্তি হিসেবে মনে করেন। | [[মআদ]] শব্দটির অর্থ ফিরে আসা। কালামশাস্ত্রবিদ এবং দার্শনিকদের মতানুসারে, মাআদ বলতে মৃত্যু পরবর্তী জীবনকে বুঝায় অর্থাৎ মানুষকে যখন পুনরায় জীবিত করা হবে। মআদ সেই দিনকে বলা হয়, যেদিন মানুষের কাজগুলির মূল্যায়ন করা হবে, সৎ ব্যক্তিরা তাদের ভাল কাজের জন্য পুরস্কৃত হবেন এবং পাপী ব্যক্তিরা তাদের খারাপ কাজের জন্য শাস্তি পাবেন। ধর্ম, কালামশাস্ত্রবিদদের ও দর্শনে যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির প্রতি দেরীতে লক্ষ্য করা হয়েছে সেটি হচেছ মৃত্যু পরবর্তী জীবনের বিষয় এবং মাআদ। ধর্মবিশ্বাসীরা মৃত্যুর পরের জীবনের প্রতি বিশ্বাসী ছিলেন এবং তারা পরকালকে তাদের বিশ্বাসের মৌলিক একটি ভিত্তি হিসেবে মনে করেন।<ref> সাজাদী, জাফর, ফারহাঙ্গে মাআরিফে ইসলামী, খ:৩, পৃ:১৮১৫।</ref> | ||
=== আদল (আল্লাহর ন্যায়পরায়ণতা) === | === আদল (আল্লাহর ন্যায়পরায়ণতা) === | ||
যদিওবা [[আদল]] তথা ন্যায়বিচার সংক্রান্ত সিফাতটিও (গুণ) আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অন্যতম কর্ম গুণ। তবে এর গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে বিষয়টি নিয়ে আশআরী, শিয়া এবং মু'তাযিলীদের মধ্যে তীব্র বিতর্কের কারণে। আর এর ফলে শিয়ারা এবং মু'তাযিলীরা আদলিয়া (আল্লাহর ন্যায়বিচারের সমর্থক) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে; এভাবেই ধীরে ধীরে ন্যায়বিচার নামক মূলনীতিটিও ইমামতের পাশাপাশি শিয়া মাযহাবের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। আল্লাহর অনেক কর্ম গুণ (সিফাতে ফে’লি) আসলে আদলের সাথে সম্পর্কিত। আদল তথা ন্যায়বিচারের বিস্তৃত ধারণা বিবেচনা করে, যার মধ্যে ধর্মীয়, নৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার অন্তর্ভূক্ত, এরূপ আকীদার মূলনীতিকে ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ হিসেবে তুলে ধরাটাই যথার্থ। [১০ | যদিওবা [[আদল]] তথা ন্যায়বিচার সংক্রান্ত সিফাতটিও (গুণ) আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অন্যতম কর্ম গুণ। তবে এর গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে বিষয়টি নিয়ে আশআরী, শিয়া এবং মু'তাযিলীদের মধ্যে তীব্র বিতর্কের কারণে। আর এর ফলে শিয়ারা এবং মু'তাযিলীরা আদলিয়া (আল্লাহর ন্যায়বিচারের সমর্থক) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে; এভাবেই ধীরে ধীরে ন্যায়বিচার নামক মূলনীতিটিও ইমামতের পাশাপাশি শিয়া মাযহাবের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। আল্লাহর অনেক কর্ম গুণ (সিফাতে ফে’লি) আসলে আদলের সাথে সম্পর্কিত। আদল তথা ন্যায়বিচারের বিস্তৃত ধারণা বিবেচনা করে, যার মধ্যে ধর্মীয়, নৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার অন্তর্ভূক্ত, এরূপ আকীদার মূলনীতিকে ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ হিসেবে তুলে ধরাটাই যথার্থ।<ref>"[http://www.makarem.ir/main.aspx?typeinfo=42&lid=0&mid=412783&catid=-2 আদল আয উসূল উদ-দীন]", পাইগাহে এট্তেলাআর-রেসানিয়ে দফতারে আয়াতুল্লাহ মাকারেম শিরাযী, এন্তেশার: ১০ মেহর ১৩৯৭ শামসি, বাযদীদ: ৯ আবান ১৪০২ শামসি।</ref> | ||
=== ইমামত === | === ইমামত === | ||
[[ইমামত]] একটি ঐশ্বরিক দায়িত্ব। শুধুমাত্র ওহী প্রাপ্তি ও এর অনুরূপ কিছু ব্যতীত নবীদের সমস্ত দায়িত্ব ইমামদের (আ.) জন্যও নির্ধারিত। এই দিক থেকে, নিষ্পাপতা যেমন নবুওযোতের শর্ত তেমন ইমামতের ক্ষেত্রেও শর্ত। এই পার্থক্যের কারণেই আমরা ইমামতকে উসুলে দ্বীনের অংশ হিসেবে মনে করবো।[ | [[ইমামত]] একটি ঐশ্বরিক দায়িত্ব। শুধুমাত্র ওহী প্রাপ্তি ও এর অনুরূপ কিছু ব্যতীত নবীদের সমস্ত দায়িত্ব ইমামদের (আ.) জন্যও নির্ধারিত। এই দিক থেকে, নিষ্পাপতা যেমন নবুওযোতের শর্ত তেমন ইমামতের ক্ষেত্রেও শর্ত। এই পার্থক্যের কারণেই আমরা ইমামতকে উসুলে দ্বীনের অংশ হিসেবে মনে করবো।<ref>"[http://www.makarem.ir/main.aspx?typeinfo=42&lid=0&mid=412783&catid=-2 তারিফে ইমামত]", পাইগাহে এট্তেলাআর-রেসানিয়ে দফতারে আয়াতুল্লাহ মাকারেম শিরাযী, এন্তেশার: ২৯ ফররদিন ১৩৯৫ শামসি, বাযদীদ: ৯ আবান ১৪০২ শামসি।</ref> ইমামত নিঃসন্দেহে ইমামিয়া শিয়াদের কালাম বিষয়ক চিন্তাধারায় কেন্দ্রীয় স্থানের অধিকারী। শিয়ারা একদিকে ইমামদের ঐশ্বরিক মনোনয়ন (নাস) এবং নিষ্পাপতায় (ইসমাত) বিশ্বাস করে, অন্যদিকে ইমামদের ইমামদের একচেটিয়া ধর্মীয় কর্তৃত্বের প্রতি আকীদা পোষণ করে, আর এই বিষয়টি হতে পারে এই পদের গুরুত্ব নির্দেশ করার মাধ্যম।<ref>আনসারী, হাসান, "ইমামত", দায়েরাতুল মাআরিফে বোজুরগে ইসলামী, তেহরান, মারকাযে দায়েরাতুল মাআরিফে বোজুরগে ইসলামী, জিল মাদখাল।</ref> | ||
== articles connexes == | == articles connexes == |